বার্তা বিভাগ :
অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিলো। চাহিদার চেয়ে দেশে আরও ৩২ লাখ টন বেশি আলু মজুত থাকার পরও বাজাওে আলুর দাম লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে। অবশেষে সেই লাগাম টানার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম সর্বোচ্চ কেজিপ্রতি ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কঠোর মনিটরিংয়ের নির্দেশনাও রয়েছে।
পেঁয়াজের পর এবার আলু নিয়ে একটি সিন্ডিকেট কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। দেশীয় চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু মজুত থাকলেও রীতিমতো লাগামহীনভাবে বাড়ছে আলুর দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গতকাল বুধবার এক দিনের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
বুধবার রাজধানীতে প্রতি কেজি সাধারণ মানের আলু বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকায়। আর ভালো মানের আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। টিসিবি’র হিসাবেই এক দিনে দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ১১১ শতাংশ। চাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেলের পর এবার আলুর এ রেকর্ড দাম বৃদ্ধিতে রীতিমতো ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এ বছর দেশের চার দফা বন্যায় উত্তরাঞ্চলসহ ৩৭টি জেলার সবজি খেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে কারণে এবার ৫০ টাকার নিচে কোনো ধরনের সবজি নেই। আর এর প্রভাব পড়েছে আলুর ওপর। আরেকটি কারণ হলো, করোনায় শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় দাম কম হওয়ায় তারা আলুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তার জন্য ত্রাণ হিসেবে চালের পাশাপাশি আলুও দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে করোনার সময় মার্চের শুরুতে প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ টাকা থাকলেও এখন তা ৬০ টাকা ছুঁয়ে গেছে।
তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলেছে, আলুর দাম বাড়ার কোনো যুক্তিই নেই। তাই সারা দেশে ৩০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর পাইকারি বাজারে প্রতিকেজির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা হিসেবে বিক্রির জন্য দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ গেটে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা। আর পাইকারি বাজারে ২৫ টাকা কেজি আলু বিক্রি করতে হবে। খুচরা পর্যায়ে তা ৩০ টাকায় ভোক্তারা কিনবেন।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদা ৭৭ লাখ টন। এর বিপরীতে গত অর্থবছরে দেশে ১ কোটি ৯ লাখ টন আলু উত্পাদন হয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা মেটানোর পরও আরো ৩২ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকবে। তাই আলুর দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট। সুযোগ বুঝে তারা বিনা কারণেই আলুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অশুভ চক্র চাল, পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এবার অন্যান্য সবজির দাম বাড়ায় আলু নিয়ে কারসাজি শুরু করছে।