বার্তা বিভাগ :
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও করোনার বিস্তার অব্যাহত আছে। আর পুরো দেশের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুটোই বেশি রয়েছে এখনো।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৯ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। এর মধ্যে আবার ৭৮ শতাংশই উপসর্গহীন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) করা এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে।
ধারণা করা হয় যে, রাজধানীর দুই সিটিতে অন্তত দেড় কোটি মানুষের বসবাস। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের উপসর্গহীন থাকার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ নানা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত জরিপ করে আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআরবি। এতে সহযোগিতা করে ইউএসএআইডি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
আইইডিসিআর’র পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা দুই সিটির ৯ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত, এমনটা বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ১২ হাজারের কিছু বেশি মানুষের ওপর এ জরিপ হয়েছে। তাই এ সংখ্যক মানুষের মধ্যে ৯ শতাংশ আক্রান্ত, এমন বলাটাই শ্রেয়। আর উপসর্গহীন ব্যক্তির সংখ্যাও ৭৮ শতাংশ, এমন বলাটা সরলীকরণ করা হবে বলে মন্তব্য তাঁর। তবে উপসর্গহীন ব্যক্তি বেশি বলেই মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু এই ৯ শতাংশের মধ্যে কতজন উপসর্গহীন, তা বলে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই তাঁর ধারণা। জরিপটি প্রাথমিক অবস্থায় আছে বলেই এমনটা বলা সম্ভব না বলে মনে করেন তিনি।
জরিপে পরিবারগুলোকে পরীক্ষার মাধ্যমে লক্ষ্মণ বা উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন এ দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। জরিপের দিন বা আগের সাত দিনের মধ্যে কোনো পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে যদি কোভিড-১৯ এর চারটি উপসর্গের একটি চিহ্নিত হয়েছে, তবে সেই পরিবারকে ‘লক্ষণযুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর জরিপের দিন বা এর আগের সাত দিনের মধ্যে কোনো পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে কোভিড-১৯ এর কোনো লক্ষ্মণ না পাওয়া গেলে সেই পরিবারকে লক্ষ্মণ বা উপসর্গহীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন উভয় পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা করা হয়েছে।
দুই সিটির ৩ হাজার ২৭৭ পরিবারের ওপর এ জরিপ চলে। এর মধ্যে ২১১ জন লক্ষ্মণযুক্ত ব্যক্তি পাওয়া যায়। এসব লক্ষ্মণযুক্ত পরিবারের মধ্যে থেকে ৪৩৫ জন উপসর্গহীন ব্যক্তি শনাক্ত হন। এর মধ্যে ২০১ জনের পরীক্ষা করা হয়। আর উপসর্গহীন পরিবারের মধ্যে থেকে ৮২৭ জন উপসর্গহীন ব্যক্তি শনাক্ত হন। তাঁদের মধ্যে থেকে ৫৩৮ জনের পরীক্ষা করা হয়। এ জরিপে ঢাকার ছয়টি বস্তিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে পরিবারের সংখ্যা ছিল ৭২০।
স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুটি কারণে এ জরিপ হয়েছে। এত দিন আক্রান্তের যে তথ্য দেয়া হচ্ছিলো, তা সেসব ব্যক্তির কাছে থেকে পাওয়া যাচ্ছে, যাঁরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে টেস্ট করাতে এসেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ দেখতে চেয়েছে যে, সমাজে রোগটা কী অবস্থায় আছে। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, উপসর্গহীন মানুষও যে আছে, সেটি তুলে ধরা। আর উপসর্গ থাকুক আর না থাকুক, উভয়ের কাছে থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।
মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘আমরা রোগীকে দেখে ভয় পাই কিন্তু উপসর্গহীন ব্যক্তিদের দেখে তো ভয় পাই না। এখানেই আসছে মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য নিয়ে মেনে চলার বিষয়। আর এ কারণেই আমরা উপসর্গহীন ব্যক্তিদের বেছে নিয়েছি। এখন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি আরও জোরদার করতে হবে, এটাই বড় এ কথা।’
মানুষ কেমন করে উপসর্গহীন মানুষ নির্ধারণ করবে- এ প্রশ্নে সেব্রিনা বলেন, ‘নির্ধারণ করার দরকার নেই। ধরেই নিতে হবে যেকোনো মানুষের মধ্যে করোনা থাকার আশঙ্কা আছে। সুতরাং আমরা সবার কাছে থেকে দূরত্ব বজায় রাখব। বিশেষ করে অপরিচিত জায়গায়।’
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ ঊর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এ সংখ্যা ছিল ১৩ শতাংশ। আর ১৫ থেকে ১৯ বয়সী মধ্যে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি দেখা গেছে ১২ শতাংশ। ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৮ শতাংশের মধ্যে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আরটিপিসিআরে যা শনাক্ত হয়, তার অন্তত ১০ গুণ বেশি থাকে, মহামারি বিশেষজ্ঞরা তা-ই বলেন। এখন এসব ব্যক্তিতে শনাক্ত করা দরকার। এখন যত রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তারও ১০ গুণ বেশি আছে বলে ধরে নেওয়া যায়। আমি বিষয়টি উদ্বেগজনক বলব না। কিন্তু কাজে নামতে হবে। আরও ব্যবস্থা নিতে হবে। সামাজিক দূরত্বের দিকে আরও ব্যাপক জোর দিতে হবে।’
উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের ৫৩ শতাংশের মধ্যে জ্বর দেখা গেছে। ৩৬ শতাংশের মধ্যে সর্দি-কাশি দেখা গেছে, ১৭ শতাংশের মধ্যে গলাব্যথা দেখা গেছে। আর মাত্র ৫ শতাংশের মধ্যে পরীক্ষার দিন শ্বাসকষ্টের লক্ষ্মণ দেখা গেছে। উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে মাত্র একজনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গযুক্ত মৃত ব্যক্তি হাসপাতালে গিয়ে মারা যান।
জরিপটি ঢাকায় হয়েছে। এবার দেশের অন্যত্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে কী অবস্থা, তা জানতে জরিপ চলছে বলে স্বাস্থ্যবিভাগ সূত্রে জানা গেছে।