বার্তা বিভাগ :
দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়- বাংলাদেশের লাখো আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার রক্ত আর মা-বোনেদের সম্ভ্রম দানের মধ্য দিয়ে অর্জিত লাল-সবুজের বাংলাদেশে আজ গৌরবের দিন। আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের ৪৯তম বিজয় দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি ও তার হানাদার বাহিনী। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন আজ। যেসকল বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই স্বাধীন পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাঁদের প্রতি আজ সশ্রদ্ধ সালাম জানাবে পুরো বাংলাদেশ।
আগামী বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বাংলাদেশ পা রেখেছে বিজয়ের ৫০তম বর্ষে। তাই এবছর বিজয় দিবসের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য। অত্যন্ত জাঁক-জমকের মাধ্যমে এবছর বিজয় দিবস পালনের কথা থাকলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে মহান বিজয় দিবস পালনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। আজ বুধবার সকালে জাতীয় পতাকা শোভা পাবে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের আঙিনায়, ছাদে। বিভিন্নস্থানে বাজানো হবে দেশাত্ববোধক ও মুক্তির গান এবং বঙ্গবন্ধুর রেকর্ড করা ভাষণ।
আজ ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটির সূচনা করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হচ্ছেনা। প্রতিবছর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সরকারের দায়িত্বশীল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনৈতিক ও প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অংশ নেন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এরপরই জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ।
করোনার কারণে এবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেননা। তাঁদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্র, ওয়েবপোর্টালে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর বিপ্লবের সোনার বাংলা। মহান বিজয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ইউনেসকো যৌথভাবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছে। আগামী বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করি।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বিজয় দিবসে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তিনি সকলের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ। সূর্যোদয়ের প্রাক্কালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল নয়টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সাড়ে নয়টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সকাল সোয়া ১০টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা সাড়ে তিনটায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা সভা হবে। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভোরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু করবে। সাড়ে আটটায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন দলটির নেতারা। সেখান থেকে ফিরে শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁরা। বেলা সাড়ে তিনটায় ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে সারা দেশে দলের নেতারা কর্মসূচি পালন করবেন।
এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানান কর্মসূচির মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন করবে। তবে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কা থাকায় এবছর উন্মুক্ত স্থানে এবং ব্যাপক সমাগম করে বিজয় উদযাপনে নিষেধ রয়েছে।