বার্তা বিভাগ :
মানুষের অধিকারের জন্য যাঁর জীবনপণ লড়াই সারাবিশ্বে বিদিত, যাঁর কণ্ঠনিসৃত অগ্নিবাণী আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে করেছিলো স্বাধীনচেতা; সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১০১তম জন্মদিন আজ ১৭ মার্চ। রাজধানীসহ সারাদেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। জন্মের ঠিক ৫০ বছর পর ১৯৭১ সালের এমনই এক মার্চে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সে ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ৯ মাসে ৩০ লাখ মানুষ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে অর্জন করে স্বপ্নের স্বাধীনতা। এর জন্য মানুষকে তিলে তিলে তৈরি করেছেন তিনি। নিজেও সয়েছেন শত যন্ত্রণা। জীবনের প্রায় ১৪টি বছর কাটিয়েছেন কারাগারে।
এর আগে ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। মুক্তির অদম্য স্পৃহায় উদ্বুদ্ধ করে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন।
বর্ণাঢ্য নানান আয়োজন, স্মরণ আর উৎসবে দেশ আজ আবারও তার মুক্তির মহানায়ককে সামনে নিয়ে এসেছে। গত বছর এই দিনটি ছিল তাঁর শততম জন্মদিন। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত পুরো বছর ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত বছর সূচি অনুযায়ী মুজিব বর্ষ উদযাপন করা যায়নি। এবছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে বাংলাদেশ। তাই শতবর্ষী বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের অনুষ্ঠান ‘মুজিব চিরন্তন’ শুরু হচ্ছে আজ ১৭ মার্চ বুধবার থেকে। চলবে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে বাংলাদেশে জাতীয় শিশুদিবস হিসেবে পালন করা হয়। তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনেতারা সশরীর এবং ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ইতিহাসের এই মহাপুরুষকে ভালোবাসা জানাবেন। সেই সঙ্গে তাঁরা মহানায়কের অমর কীর্তির কথা স্মরণ করবেন।
১০ দিনের এই উৎসবের আজ প্রথমদিনেই সস্ত্রীক উপস্থিত হয়েছেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্। সশরীর হাজির হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।
এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুুডো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং স্যু-কুয়েন, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আহমেদ আল-ওথাইমিন এবং পোপ ফ্রান্সিস ভার্চ্যুয়ালি মুজিব চিরন্তনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দেবেন ভিডিও বার্তা।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের এই অনুষ্ঠানে প্রতিদিন থাকছে থিমভিত্তিক নানা আয়োজন। এগুলোর মধ্যে পাঁচ দিন দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ নেতারা বিশেষ অতিথি হয়ে বক্তৃতা দেবেন এবং বক্তৃতা দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বাকি পাঁচ দিন ভিডিও বক্তৃতা দেবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান নির্বাহীরা। এছাড়াও প্রতিদিন থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১০ দিনের এই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে মৈত্রী রাগ পরিবেশন করবেন ভারতীয় শিল্পীরা। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমিতসংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে ঙথাঙথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিদিনের অনুষ্ঠান ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচার করা হবে।
উৎসবের প্রথমদিনে আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’ থিমে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্ স্বশরীরে উপস্থিত থাকবেন। শিশুশিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হবে অনুষ্ঠান। মুজিব চিরন্তন থিমের ওপর একটি এনিমেশন চিত্র প্রদর্শিত হবে। থিম সংয়ের মিউজিক ভিডিও প্রদর্শিত হবে। স্বাগত ভাষণ রাখবেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
আজ ভিডিও বার্তা দেবেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডো। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি। পরে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অতিথিদের কাছে স্মারক হস্তান্তর করা হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ৬টার পর বাংলাদেশ এবং ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে ১৭ মার্চকে ঘিরে রাজধানীর বড় ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বর্ণিল আয়োজন অব্যাহত থাকবে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। সড়কের দু’পাশ ও মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে বাহারি রংয়ের আলোর ঝলকানি।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আগত অতিথিরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আজ ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’ আয়োজিত কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত নেতারা অংশগ্রহণ করবেন। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে থাকছে আলাদা কর্মসূচি।
দেশব্যাপী মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশের মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত. জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে।
আগামী ২১ মার্চ রোববার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।