বার্তা বিভাগ :
না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিএনপি নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ মওদুদ আহমদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের, আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান মওদুদ আহমদকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। এর আগে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত ৩০ ডিসেম্বর মওদুদ আহমদকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর ফুসফুসে পানি জমে যায়। গত ৭ জানুয়ারী তাঁর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে তাঁকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সাথে গিয়েছিলেন স্ত্রী হাসনা মওদুদ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মওদুদ আহমদের চলে যাওয়া শুধু বিএনপির জন্য নয়, দেশের জন্যই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, তিনি একজন খ্যাতনামা আইনজীবী এবং উঁচু মানের লেখক ছিলেন। মওদুদ আহমদ বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফখরুল আরও বলেন, ‘তাঁর (মওদুদ আহমদ) এই চলে যাওয়ায় আমরা শোকাহত। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
মওদুদ আহমদ দেশের এক বর্ণাঢ্য রাজনীতিক। ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের জন্ম। তাঁর পিতার নাম মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও মায়ের নাম বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ ছিলেন চতুর্থ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স (সম্মান) পাশ করে লন্ডনের লিংকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-এ্যাট-ল' ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশুনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
এইচ এম এরশাদের সময় ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬ সালে তাঁকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমেদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। মওদুদ আহমেদ পাঁচবার নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনী সহায়তা দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল নিযুক্ত হন মওদুদ।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের জামাতা।