বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম মাহমুুদউল্লাহ রিয়াদ। অনেকবারই হয়েছেন অবহেলার শিকার। ফিরেই আবার সমালোচকদের দিয়েছেন উপযুক্ত জবাব। কিন্তু কত আর অবহেলা সইবেন দেশের বিপদ মুহূর্তে ত্রাতা হয়ে মাঠে বুক চিতিয়ে লড়াই করা ভদ্র এই খেলোয়াড়! তাই কি শেষে অভিমানেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তিনি।
সেই বিদায়কেও কতটা স্মরণীয় করে দেয়া যায়-সেই ছাপও রাখলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জিম্বাবুয়ের সাথে একমাত্র টেস্টে ধুকতে থাকা বাংলাদেশকে আবারও টেনে তুলতে মরিয়া হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গেছেন রিয়াদ। সাহস যুগিয়েছেন লেজের দিকে থাকা তাসকিনকেও। ফলে তাসকিনের প্রথম টেস্ট ফিফটিও হয়ে গেল। আর মাহমুুদউল্লাহ নিজে খেলেছেন ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংস!
আর তাতেই ভর করে টেস্ট ম্যাচটিও বাংলাদেশ জিতে নিয়েছে ২২০ রানের বিশাল ব্যবধানে। দলীয় অন্য সহযোদ্ধারা যোগ্য সম্মানটুকু উপহার দিয়েছেন রিয়াদকে। ম্যাচের শেষদিনে ফিল্ডিংয়ে নামার আগে সতীর্থ খেলোয়াড়রা দিলেন গার্ড অব অনার। ম্যাচে অনবদ্য অবদান রাখায় হয়েছেন ম্যাচসেরাও। অভিমানী মাহমুদউল্লাহকে ক্রিকেট উজাড় করে দিয়েছে তার সকল ভালবাসা।
ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে মাহমুদউল্লাহকে ২২০ রানের বড় জয় উপহার দিয়েছে টিম টাইগার। দেশের বাইরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় এটিই। আগের বড় জয়টিও ছিল জিম্বাবুয়েতে, ১৪৩ রানের।
রবিবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে খেলতে নামা বাংলাদেশ বোলারদের দাপটে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে সুবিধে করতে পারেনি স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে চতুর্থদিন ১৪০ রানে ৩ উইকেট হারানো দলটি এদিন দ্রুত আরও ৪টি উইকেট হারিয়ে বসে। মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ও তাসকিন আহমেদের তোপে কেউই টিকতে পারেনি।
আগেরদিনের অপরাজিত থাকা ডিওন মায়ার্স মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগে ২৬ রান করেন। তবে পঞ্চম দিন বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন ডোনাল্ড তিরিপানো। ভিক্টর নিয়াচি ও ব্লেসিং মুজারবানির সঙ্গে দুটি দারুণ জুটি উপহার দিয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কমান। অবশেষে তাকে তুলে নেন পেসার এবাদত হোসেন। ১৪৪ বলে ৬টি চারে ৫২ রান করেন তিরিপানো। শেষ অবধি ২৫৬ রানে থামে দলটির দ্বিতীয় ইনিংস।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে মিরাজ ও তাসকিন ৪টি করে উইকেট ভাগ করে নেন। প্রথম ইনিংসের ৫টির সঙ্গে এবার মিরাজের শিকার ৪টি। ১৪৮ রানে ৯ উইকেট, দেশের বাইরে বাংলাদেশের সেরা বোলিং কীর্তি এটিই। আর ৮২ রানে ৪ উইকেট তাসকিনের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। এছাড়া সাকিব আল হাসান ও এবাদত একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে মাহমুদউল্লাহর ১৫০ রানের অসাধারণ ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রান করে। জবাবে ২৭৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। পরে বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর দ্রুত সেঞ্চুরিতে এক উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ব্যাটিংয়ে পাঠায় জিম্বাবুয়েকে। বিশাল রান তাড়া করে আর জেতা হয়ে ওঠেনি স্বাগতিকদের। ফলে মাহমুুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ী টেস্টে অনবদ্য জয় পেলো বাংলাদেশ।