চট্টগ্রাম অফিস :
এবার শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। সরকারি সেবা প্রদানে শুদ্ধাচার চর্চার স্বীকৃতিস্বরুপ তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এর আগে গতবছর তিনি পেয়েছিলেন জনপ্রশাসন পদক।
১০ আগস্ট সোমবার সকালে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মো. ইলিয়াস হোসেনকে শুদ্ধাচার পুরস্কার তুলে দেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ। এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহাসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালের ৬ মার্চ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস হোসেন।
তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফ লাইন হিসেবে খ্যাত কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।
টানা পাঁচ দিন অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত কর্ণফুলী নদী তীরের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করা হয়।
২৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বেদখলে থাকা প্রায় ১০ একর সরকারি জমি উদ্ধারের পাশাপাশি পাঁচটি খালের মুখও দখলমুক্ত করা হয় এই অভিযানে।
এছাড়া নগরের সরকারি বেসরকারি মালিকানাধীন ১৭টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান, দেশের প্রথম জেলা হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ডিজিটাল করার উদ্যোগ গ্রহণ, জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় ক্ষতিপূরণের চেক উত্তোলনে হয়রানি বন্ধের পদক্ষেপ, শিক্ষার মানোন্নয়নে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন, বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালুর পদক্ষেপসহ শিক্ষার উন্নয়নে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা গস্খহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হন মো. ইলিয়াস হোসেন।
এদিকে মো ইলিয়াস হোসেনের সময়ে ভেজাল খাদ্য, মাদক, বেশি দামে ওষুধ বিক্রি ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নজিরবিহীন অভিযান পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন।
এক সময়ে ময়লার ভাগাড় হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে বদলে দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করায় ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন পদক লাভ করেন মো. ইলিয়াস হোসেন।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সংস্কার, সাধারণ ও অবহেলিত দুস্থ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণি বিষয়ক সচেতনতামূলক শিক্ষা কার্যক্রম, নতুন নতুন প্রাণি সংযোজন, সংরক্ষণ ও পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য তিনি এ পদক গ্রহণ করেন।
করোনা সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রামে লোকজনকে ঘরে রাখতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, কর্মহীন দিনমজুরদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ করোনার চিকিৎসা সামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নানা উদ্যোগ দেশব্যাপী প্রশংসা পায়।
করোনা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের এসব কাজ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।
গত ২৬ জুলাই বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নৈতিকতা কমিটির এক সভায় জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনসহ তিন জনকে শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।
শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য মনোনীত বাকি দুই জনের মধ্যে একজন বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আরাফাত এবং অন্যজন উন্নয়ন শাখার উচ্চমান সহকারী নেপাল কান্তি দাশ।