চট্টগ্রাম অফিস :
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে তাঁর জানাজা এবং দাফন সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক শেখ আহমদ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর খবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। মৃত্যুকালে আহমদ শফীর বয়স ১০৩ বছর হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় আনা হয়। এরপর তাঁকে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতা ছাড়াও ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনে ভুগছিলেন।
শাহ আহমদ শফীর জানাজা আজ ১৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ২টায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। মাদ্রাসার ভেতর উত্তর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।
মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মাওলানা শেখ আহমদ বলেন, শনিবার বেলা দুইটায় মাদ্রাসার মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দাফন করা হবে উত্তর মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে। হুজুরের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর রাতে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকেরা বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চট্টগ্রামের ৪ উপজেলায় ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে হাটহাজারী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া এবং ফটিকছড়িতে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম। তিনি বলেন, শফী হুজুরের জানাজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শনিবার সকাল থেকে জানাজার স্থান হাটহাজারীতে ৪ প্লাটুন, পটিয়ায় ২ প্লাটুন, রাঙ্গুনিয়ায় ২ প্লাটুন এবং ফটিকছড়িতে ২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস-এর খবরে বলা হয়েছে, এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আল্লামা শফী দেশে-বিদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদকে হারাল। রাষ্ট্রপতি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পৃথক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আহমদ শফী দেশে ইসলামি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। তাঁর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক। ছোট ছেলে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক।
আহমদ শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।
১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন। ছাত্রদের বিক্ষোভের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা কমিটির সভায় আহমদ শফী মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর ছেলে আনাস মাদানীকে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পরপরই মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান ছিলেন।