বার্তা বিভাগ :
জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ হিসেবে আগামীকাল শনিবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে পালিত হবে মুসলিম উম্মাহর বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ।
বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যে ভিন্ন মাত্রা ও আবহে এ বছর আসছে এই ঈদ। করোনার প্রভাব ঈদ পালনে অনুষঙ্গগুলোর ছন্দপতন ঘটাচ্ছে। তবে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে কোরবানির রেওয়াজ পালনেরও প্রস্তুতি চলছে।
পবিত্র হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে বিশ্ব মুসলিমগণ ঈদের মাঠে ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের পর সাধ্য ও পছন্দ অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আরবি আযহা এবং কোরবান উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা, অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া প্রভৃতি।
সুরা হাজ্জে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর (কোরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’ আল্লাহর বান্দারা কে কতটুকু ত্যাগ ও খোদাভীতির পরিচয় দিতে প্রস্তুত এবং আল্লাহপাকের নির্দেশ পালন করেন তিনি তা-ই প্রত্যক্ষ করেন কেবল।
প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে (মুসনাদে আহমদ)। আল কোরআনের সুরা কাউসারে বলা হয়েছে, ‘অতএব, তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।’ সুরা হাজ্জে বলা হয়েছে, ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’
জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো এক দিন কোরবানি করা যায়। কোরবানিকৃত পশুর তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিন, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার রীতি ইসলামী পরিভাষায় মুস্তাহাব (উত্তম)। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। এদিকে ৯ জিলহজ্ব ফজরের নামাজের পর থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তালবিয়াহ অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ অন্তত একবার পাঠ করা ওয়াজিব।
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক জাতির বাৎসরিক আনন্দ-ফুর্তির দিন আছে। এই দিনে ধনী-গরিব, বাদশা-ফকিরনির্বিশেষে সব মুসলমান এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করে, একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করে। তবে এবছর করোনার কারণে হ্যান্ডশেক এবং কোলাকুলি থেকে সকলে বিরত থাকতে হবে। ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব। আজ থেকে ঈদুল আযহা উপলক্ষে তিন দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে।
দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এদিকে ঈদুল আযহা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে বেনাপোল স্থল বন্দর এবং ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে তিন দিন আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকালে বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটিতে বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শনিবার (১ আগস্ট) মুসলিম সম্প্রদায়ের ঈদ উৎসব পালন হবে। পরের দিন রবিবারও বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সোমবার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে স্বাভাবিক নিয়মে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।