গত ৫ আগস্টের আগেও এ কার্যালয় থেকে দলের কর্মকা- পরিচালিত হতো। মহানগরসহ জেলার ১৭টি উপজেলার হাজারো নেতাকর্মীর ভিড়ে জমজমাট থাকত এটি। কিন্তু আজ ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে কার্যালয়টি। এ যেন এক ‘ছাড়া বাড়ি’। বলা হচ্ছে কুমিল্লা নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় রামঘাটলায় অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের কথা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কান্দিরপাড় রামঘাটলায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের পোড়া ভবনটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে রাত নামলে পথশিশু আর মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। জনশূন্য এ কার্যালয়ের নিচতলা থেকে শুরু করে ৯ তলা ভবনের প্রতিটি তলার একই অবস্থা। যত্রতত্র মলমূত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় আশপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
জানা যায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের রামঘাটলায় ১০ শতক জমির ওপর নির্মিত এ ভবনে ছিল আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। ৯ তলা ভবনটিতে ছিল মহানগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস, কনফারেন্স হল, মিডিয়া রুম, গেস্ট হাউজ, নামাজের কক্ষ, ক্যাফেটেরিয়া, ইনডোর গেম স্পট, একাধিক লিফট, সিসি ক্যামেরা, ইন্টারকম, অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ওয়াইফাইসহ আধুনিক প্রযুক্তির সব সুযোগ-সুবিধা। ভবনের ভেতরে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর মিশেলে আলোকচিত্রে তুলে ধরা হয়েছিল দলের ইতিহাস। প্রতিটি তলার নামকরণ করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে। ভবনের সম্মুখে শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল প্রতিকৃতি। ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর নান্দনিক কারুকাজ ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এ ভবনটি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, গত ৫ আগস্টের আগে এ কার্যালয়ে বেশ কিছু কর্মচারী কাজ করতেন। তবে সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এসব কর্মচারীও আত্মগোপনে গেছেন। ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় এমরান হোসেন নামে এক যুবক বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের আগে এ অফিসের সামনে শতশত নেতাকর্মী দেখা যেত। সবসময় সরগরম থাকত পুরো অফিস। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পরপরই পুরো অফিসটি ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এটি এখন একটি ছাড়া বাড়ি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন বিকেলে ভবনটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে চলে ভাঙচুর ও লুট। যে যার মতো করে কার্যালয়টির বিভিন্ন তলার কক্ষে থাকা মূল্যবান আসবাব, স্টিলের আলমারি, কম্পিউটারসহ সব ধরনের মালপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে খুলে নেওয়া হয়েছে লোহা, স্টেইনলেস স্টিল, দরজা-জানালা। এরপর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।’