রোজা আল্লাহর সর্বাধিক পছন্দনীয় আমল। এর প্রতিদান স্বয়ং তিনি নিজ হাতে দিবেন বলে হাদিসে কুদসিতে ঘোষণা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২)
সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময়টা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ একটা নেয়ামত। এসময় রোজাদারের হূদয়-মনে সীমাহীন আনন্দের সমীরণ বয়ে যায়। এটা সাময়িক আনন্দ। প্রকৃত আনন্দ তো হবে সে দিন, যেদিন রোজাদার ব্যক্তি মহান আল্লাহর সাক্ষাতে ধন্য হবে। হাদিসে এসেছে, ‘রোজাদারের আনন্দ দুটি, যা তাকে আনন্দিত করে। যখন সে ইফতার করে, আনন্দিত হয় এবং যখন সে স্বীয় প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৮৩)
ইফতারের সময়টা খুবই বরকতপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা এসময় রোজাদারের দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। রোজাদারের দোয়া, যতক্ষণ না সে ইফতার করে, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
সূর্যাস্তের পর দ্রুত ইফতার করা অনেক ফজিলতপূর্ণ ও কল্যাণকর। যারা সময় হওয়ার পর দ্রুত ইফতার করে নেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের পছন্দ করেন। তিনটি বস্তু আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তার মধ্যে একটি হলো দ্রুত ইফতার করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি বস্তু আল্লাহর প্রিয়; সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা, শেষ সময় পর্যন্ত সাহরিকে বিলম্ব করা এবং নামাজে (দাঁড়ানো অবস্থায়) এক হাতের ওপর অপর হাত রাখা।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৩০৩৮)
খেজুরের মাধ্যমে ইফতার করা উত্তম। এটা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। এতে সারাদিনের ক্লান্তি এবং ক্ষুধার দুর্বলতা দূর হয়। সালমান ইবনে আমের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি খেজুর না থাকে তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা, পানি অতিশয় পবিত্র বস্তু।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৫)
অন্য হাদিসে আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিব নামাজের আগে তরতাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তরতাজা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি করে নিতেন।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস :
আরবে খেজুর সহজলভ্য। ধনী-গরীব সবার কাছেই তা পাওয়া যায়। পাশাপাশি তা স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর। এজন্য মহানবী (সা.) এটা দিয়ে ইফতার করেছেন এবং অন্যদের করতে বলেছেন। যদি কারো কাছে খেজুর না থাকে, তাহলে অন্য যেকোনো হালাল খাদ্যের মাধ্যমে ইফতার করতে কোনো সমস্যা নেই।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ
রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।