1. [email protected] : Administrator :
  2. [email protected] : mukulislam :
  3. [email protected] : newsman :
  4. [email protected] : Osman Goni : Osman Goni
  5. [email protected] : Yousuf :
কম খরচে হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা চট্টগ্রামেই - SHAPLA TELEVISION
June 9, 2025, 6:34 am

কম খরচে হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা চট্টগ্রামেই

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, অক্টোবর ২১, ২০১৯
  • 343 Time View

চট্টগ্রাম ছাড়াও কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলার রোগীর উপচে পড়া ভিড় থাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে। এই অঞ্চলের সব শ্রেণির মানুষের কাছে একমাত্র নির্ভরতার স্থান এই বিভাগ। ১০ অক্টোবর হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে। জুয়েল শীলতিন বছরের এক শিশুর হার্টে ছিদ্র। মধ্যবিত্ত মা-বাবার কতটুকুই বা সাধ্য। স্বজনদের কাছ থেকে শুনে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে। সপ্তাহখানেক আগে তার অস্ত্রোপচার হয়। এর পর থেকে পোস্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছে সে।

১০ অক্টোবর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি শয্যায় বসে তার মায়ের সঙ্গে খেলছে। কথা বলছে নার্সদের সঙ্গেও। তার মা বলেন, এখন সে ভালো আছে। কম খরচে এখানে অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে।

চমেক হাসপাতালে ২০১২ সালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগটি চালু করা হয়। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রামেই প্রথম এই ধরনের বিভাগ চালু হয়েছে। এর বাইরে ঢাকার জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটে হৃদ্‌রোগের অস্ত্রোপচার হয়।

চালু হওয়ার পর থেকে চমেক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে প্রায় পৌনে চার শ অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার মধ্যে ৯০ ভাগই ওপেন হার্ট এবং বাইপাস সার্জারি। সেই সঙ্গে ১০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কম খরচে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় এখানে।

বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখানে হৃদ্‌রোগের সব ধরনের সার্জারি হয়। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭৫টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য তা ১০০ তে নিয়ে যাওয়া। তবে বিভাগের কলেবর অনুযায়ী জনবলের সংকট রয়ে গেছে। এর মধ্যে পারফিউনিস্ট সমস্যা প্রকট। এখনো ঢাকা থেকে পারফিউনিস্ট এনে অস্ত্রোপচার করতে হয়।

* কম খরচে নিম্নমধ্যবিত্তদের অস্ত্রোপচার চলে এখানে। ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচার করতে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। * শয্যা ও মেঝেতে মিলে দিনে গড়ে ৩০০ রোগী থাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে।

শুরু থেকে পারফিউনিস্টের অভাব ছিল। মাঝখানে বিভাগের চারজন নার্সকে পারফিউনিস্ট হিসেবে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও তাঁদের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না। এখন অস্ত্রোপচারের জন্য ঢাকা থেকে পারফিউনিস্ট আনতে হয়।

সার্জারি বিভাগে ৪০টি সাধারণ শয্যা থাকলেও কার্যকর রয়েছে ২০টি। কার্ডিয়াক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি, কার্ডিয়াক অ্যানেসথেসিয়া ও ভাসকুলার সার্জারি ইউনিট রয়েছে এখানে। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও অবেদনবিদের অভাবে বাসকুলার সার্জারি হয় না।

চিকিৎসকেরা জানান, কম খরচে নিম্ন মধ্যবিত্তদের অস্ত্রোপচার চলে এখানে। ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচার করতে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো দরকার হয়। বাইরে ওপেন হার্ট করতে গেলে দুই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো খরচ পড়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘পর্যাপ্ত জনবল পেলে আমরা কম খরচে এখানে ওপেন হার্ট ও ক্লোজড হার্টসহ যাবতীয় অস্ত্রোপচার করতে পারব।’ আরও কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি দরকার বলে তিনি জানান। এখানে ৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

১০ অক্টোবর কার্ডিয়াক সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শয্যায় অস্ত্রোপচারের পর শুয়ে আছেন ব্যবসায়ী তৌহিদুল আলম (৩৪)। তাঁর বাড়ি খাগড়াছড়িতে। তাঁর বাইপাস হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর। এর পর থেকে আইসিইউতে রয়েছেন তিনি। অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে খরচ কম পড়েছে বলে তিনি জানান।

ওপরে সাধারণ শয্যায় অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করছেন ১০ জন রোগী। এর মধ্যে আবদুল মান্নান এসেছেন কুমিল্লা থেকে। তার বাইপাস অস্ত্রোপচার হবে। পাশের শয্যায় দাউদ হোসেনও এসেছেন কুমিল্লা থেকে।

দাউদ হোসেন বলেন, ‘এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। সবাই আন্তরিক। আর বিভাগটি খুব পরিচ্ছন্ন। আমাকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাগবে বলা হয়েছে।’

সরকারি এই হাসপাতালের বাইরে চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে ফরটিস, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি এবং ম্যাক্স হাসপাতালে সীমিতসংখ্যক হার্টের অস্ত্রোপচার হয় বলে চিকিৎসকেরা জানান।

হৃদ্‌রোগ বিভাগের রোগীর ভিড়

শয্যা ও মেঝেতে গিজগিজ করছে রোগী। চট্টগ্রাম ছাড়াও কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলার রোগীর উপচে পড়া ভিড় চমেক হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে।

অন্যান্য সাধারণ চিকিৎসার সুযোগ প্রতিটি জেলায় কম–বেশি থাকলেও হৃদ্‌রোগের সেবা সেভাবে নেই। তাই এই অঞ্চলের সব শ্রেণির মানুষের কাছে একমাত্র নির্ভরতার স্থান চমেক হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগ।

চমেক হাসপাতালে হৃদ্‌রোগ বিভাগ চালু হয় ১৯৮৯ সালে। এক বছর আগেও হৃদ্‌রোগ বিভাগে শয্যা ছিল ৫০টি। রোগীর চাপের কারণে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ শয্যায়। তারপরও জায়গার সংকুলান হয় না।

শয্যা ও মেঝেতে মিলে দিনে গড়ে ৩০০ রোগী থাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে। এর মূল কারণ, স্বল্প খরচে আধুনিক চিকিৎসা মেলে এখানে।

হৃদ্‌রোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার জন্য এখানে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী আসে। প্রতিদিন এনজিওগ্রাম হয় গড়ে ১০টি। জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের বাইরে একমাত্র সরকারি হাসপাতাল যেখানে ১০ হাজার এনজিওগ্রামের মাইলফলক পার করেছে এই বিভাগ।

বেসরকারি পর্যায়ে যেখানে এনজিওগ্রাম করতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ, এখানে তা স্বল্প মূল্যে (পাঁচ হাজার টাকায়) করা সম্ভব হয় বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, রোগীর চাপ সামাল দেওয়ার জন্য গত মাসে ১৬ থেকে ৩১ শয্যায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। তারপরও জায়গা হচ্ছে না। ১০ অক্টোবর ফেনী থেকে আসা এক রোগীর সঙ্গে কথা হয়। রফিক নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে এখানে চলে আসি। রোগী বেশি। তবু চিকিৎসা চলছে।’

এখানে রয়েছে ২টা ক্যাথ ল্যাব, হার্ট ফেইলিউর ক্লিনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ব্লক। এ ছাড়া বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে ১০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানান সহকারী অধ্যাপক রিজুয়ান রেহান।

চিকিৎসকেরা জানান, রোগী অনুযায়ী জনবল নেই এই বিভাগে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিয়ে রোগীদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে চিকিৎসক দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একজন সহযোগী অধ্যাপক, তিনজন সহকারী অধ্যাপক, দুজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, একজন রেজিস্ট্রার ও তিনজন সহকারী রেজিস্ট্রার দিয়ে এই বিভাগ চলছে।

এই পদের বাইরে আরও একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং দুজন সহকারী অধ্যাপক সংযুক্তি এবং বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু স্থায়ী চিকিৎসা কর্মকর্তাও নেই।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা অস্থায়ীভাবে এই বিভাগে দিয়েছে। বিভিন্ন কোর্সে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আসা শিক্ষার্থীদের দিয়ে এই বিভাগ সচল রাখা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এত বড় বিভাগটিতে এখন পর্যন্ত একজন অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি করা যায়নি। বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, একজন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা জরুরি। এত বড় বিভাগে কোনো অধ্যাপক পদ নেই।

এই বিভাগটিতে এ পর্যন্ত ৪৭০টি কার্ডিওভাসকুলার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এতে ৯৬ শতাংশ সফল রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। একই সময়ে ১০ হাজার রোগীকে পরামর্শ এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
Theme Customized By LiveTV