1. [email protected] : Administrator :
  2. [email protected] : mukulislam :
  3. [email protected] : newsman :
  4. [email protected] : Osman Goni : Osman Goni
  5. [email protected] : Yousuf :
চলে গেলেন ভারতের শক্তিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় - SHAPLA TELEVISION
June 8, 2025, 2:20 am

চলে গেলেন ভারতের শক্তিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, নভেম্বর ১৫, ২০২০
  • 699 Time View
অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক :

অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনেছেন সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু’ খ্যাত ভারতের শক্তিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৬ বছর।
১৫ নভেম্বর রবিবার ভারতীয় সময় ১২টা ১৫ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে অভিনেতা, আবৃত্তিকার, কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। হাসপাতাল সূত্র বলছে, কোভিড এনসেফ্যালোপ্যাথির কারণেই সব রকম চিকিৎসার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
গত ১ অক্টোবর থেকে বাড়িতে থাকাকালীন প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হন। তবে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ৬ অক্টোবর তাঁকে ভর্তি করানো হয় বেলভিউ নার্সিং হোমে। এখানে সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর তাঁর করোনার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই সৌমিত্র সুস্থ হতে থাকেন। চিকিৎসা চলছিল।
পরে আবার ২৪ অক্টোবর রাত থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর ধীরে ধীরে তিনি চেতনাহীন হয়ে পড়েন। তাঁকে সুস্থ করার জন্য গত বৃহস্পতিবার প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয়। এর আগে বুধবার কিডনির ডায়ালাইসিস করা হয়। শুক্রবার বিকেলে তাঁর হৃদস্পন্দন হঠাৎ করে বেড়ে যায়, রাতে চেতনা স্তর ৫-এ নেমে যায়। সৌমিত্রর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ১৬ সদস্যের চিকিৎসা দলের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। ফুসফুসে আরও বেশি করে অক্সিজেন পৌঁছানোর জন্য শনিবার বাড়ানো হয়েছিল অক্সিজেনের মাত্রা। এ সময় তাঁর চিকিৎসা দলের প্রধান ক্রিটিক্যাল বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর জানিয়েছিলেন, এই চেতনা স্তর ৩-এ নেমে গেলে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্রেন ডেথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁকে বিভিন্ন ধরণের লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। অরিন্দম করের ভাষায়, ‘মনে হচ্ছে, তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমাদের ৪১ দিনের লড়াই যথেষ্ট নয়। আপাতত আমাদের নতুন কিছু বলার নেই। তিনি যাতে ভালো হয়ে ওঠেন, সবাইকে সেই প্রার্থনা করতে হবে।’ চিকিৎসকেরা প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছিলেন অরিন্দম কর। অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে।
রবিবার তাঁকে দেওয়া হয়েছিল শতভাগ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট। রক্তচাপ, হার্টবিট, হার্ট রেট স্বাভাবিক করার জন্য যা যা ওষুধ দরকার, সব দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুতেই চিকিৎসায় তিনি সাড়া দেননি। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, তিনি বিদায় নেন প্রকৃতির নিয়মে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রথমত ছিলেন অভিনেতা। কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন তাঁর বিপুল বৈচিত্র্যের একেকটি দিক। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সবকিছু নিয়েই অনন্য। তিনি এমনই এক শিল্পী, যাঁর মূল্যায়ন নিয়ে কোনো যুক্তি-তর্ক তোলার অবকাশ রাখে না। বলা হতো সময়ের ধুলা তাঁর আভিজাত্যের সৌন্দর্য স্পর্শ করতে পারে না।
১৯৩৫-এর ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় জন্ম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। জীবনের প্রথম ১০ বছর সৌমিত্র কাটিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে। তাঁর দাদার নাটকের দল ছিল। বাড়িতে নাট্যচর্চার পরিবেশ ছিল। ছোটবেলা থেকেই নাটকে অভিনয় শুরু করেন তিনি। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে সৌমিত্র ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন। কলেজের ফাইনাল ইয়ারে হঠাৎ একদিন মঞ্চে শিশির ভাদুড়ীর নাটক দেখার সুযোগ হয় তাঁর। সেদিনই জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাঁর। তিনি পুরোদস্তুর নাটকে মনোনিবেশ করেন।
শিশির ভাদুড়ীকে গুরু মানতেন সৌমিত্র। নিজেই বলেছেন, অদ্ভুত এক বন্ধুত্ব ছিল তাঁদের। সব রকম আলোচনা হতো দুজনের। বাংলা সিনেমাজগতের আরেক কিংবদন্তি ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে সৌমিত্রকে পরিচয় করিয়ে দেন সত্যজিৎ নিজেই। সিনেমার জগতে হাতেখড়ি হয় সৌমিত্রর সে সময়। ‘অপুর সংসার’-এ অপু হন তিনি। প্রথম ছবিতেই আলোচনায় এসেছিলেন। জানা যায়, সে ছবির শুটিংয়ে প্রথম দিনের ফার্স্ট শটেই সিন ওকে। ছবিতে ‘খাওয়ার পর একটা করে, কথা দিয়েছ’, তাঁর আর শর্মিলা ঠাকুরের সেই সংলাপ, রসায়ন এখনো বাঙালি মননে অমলিন। পরে একে একে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘দেবী’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, ‘চারুলতা’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’সহ বহু ছবি করেছেন তিনি। সত্যজিতের প্রায় ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র। সত্যজিতের সৃষ্টি ‘ফেলুদা’কে বড় পর্দায় জীবন্ত করেছিলেন তিনিই। ফেলুদা পরে বহুবার হয়েছে ছোট ও বড় পর্দায়। কিন্তু যেকোনো বাঙালি একবাক্যে স্বীকার করবেন যে সৌমিত্রর মতো ফেলুদা আর কেউ নন।
সৌমিত্রর উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘অশনিসংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘দেবদাস’, ‘নৌকাডুবি’, ‘গণদেবতা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘আতঙ্ক’, ‘গণশত্রু’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘তিন কন্যা’, ‘আগুন’, ‘শাস্তি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’প্রভৃতি।
অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকেসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি আবৃত্তি, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন করেছেন তিনি। ১৯৬০ সালে সৌমিত্র বিয়ে করেন দীপা চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে পৌলমী চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃতি চর্চা করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
Theme Customized By LiveTV