ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তিন সন্তানের জননী শারমিন বেগম ওরফে হরমুজাকে (৪৮) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ফারহান ভূইয়া রনিকে (২৭) বুধবার বিকেলে সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। এসময় রনি হত্যার অপরাধ স্বীকার করে আদালতে স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশের আদালত পরিদর্শক মো. হাবিবুল্লা সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে শারমিন বেগম হরমুজাকে হত্যা করা হয়েছে।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার ফারহান ভূইয়া রনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন শারমিন বেগম ওরফে হরমুজা তাবিজ করে নিজের মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল এভাবে রনির পরিবারের সম্পত্তি আত্মসাৎ করা। তাই তাঁকে কৌশলে ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে।
আদালত পরিদর্শক মো. হাবিবুল্লা সরকার জানান, পরিত্যক্ত একটি ঘরে হত্যার পর আসামি রনি হরমুজার মাথা বিচ্ছিন্ন করে তা মাটির নিচে পুঁতে রাখে এবং অবশিষ্ট দেহটি জ্বালিয়ে দেয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরআগে হত্যা ও মরদেহ গুম করার অভিযোগে রনিকে একমাত্র আসামি করে হরমুজার মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে আখাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আলীম বলেন, ‘তদন্ত কার্যক্রম চলমান। পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে রনিকে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আখাউড়া উপজেলার গাজীর বাজার গ্রামে দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভূইয়ার বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় হরমুজা বেগমকে মাথা কেটে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন ফারহান ভূইয়া রনি।
ওসি মো. ছমিউদ্দিন জানান, শারমিন বেগম হরমুজার স্বামী প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে কুলা বিক্রির জন্য ঘর থেকে বের হয়ে যান। সকাল আনুমানিক ৬টা ২০ মিনিটের দিকে ফারহান ভূইয়া রনি তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে হরমুজাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। এরপর সাড়ে ৬টার দিকে আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রহিমপুর পূর্বপাড়ায় রনিদের পরিত্যক্ত বেড়াবিহীন দোচালা টিনের চালের নিচে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন। ছুরি দিয়ে গলা সম্পূর্ণ আলাদা তথা দ্বিখণ্ডিত করেন তিনি। এরপর রনি তার বাড়ির আনুমানিক ৩০০ গজ দূরে পুকুরের দক্ষিণ পাশের জমিতে মাটিতে গর্ত করে খণ্ডিত মাথা পুঁতে রাখেন। মাথাবিহীন শরীরের বাকি অংশে কম্বল পেঁচিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরিত্যক্ত ঘরের ভেতরে আগুন দেখে স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিক থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে মাথাবিহীন মানুষের একটি মরদেহ আগুনে পুড়তে দেখে। তাৎক্ষণিক পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে সম্পূর্ণ দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফারহান ভূইয়া রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে ও দেখানো জায়গা জনৈক আশরাফ আলীর জমি থেকে মাটি খুড়ে দেহবিহীন মাথা এবং পাশের পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়। শারমিন বেগম হরমুজা আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর গ্রামের মো. নুরুল ইসলামের স্ত্রী। ফারহানের বাবা উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভুইয়া।
ওসি আরও জানান, হরমুজা তাবিজ করে রনির কাছে তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তাদের সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করছিল। সেজন্যে রনি ক্ষুব্ধ হয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশকে জানিয়েছে।