বার্তা বিভাগ :
দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তাকে প্রথম টিকা প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় এই কার্যক্রম।
২৭ জানুয়ারী বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার পর রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মন চাচ্ছে আমরা গিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু আগে আগে নিলে বলবে আগে নিজেই নিলো, কাউকে দিলো না। তাই সবাইকে দিয়ে নিই, তারপর আমি নেবো।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর প্রথম টিকা নেন ওই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। এরপর পর্যায়ক্রমে চিকিৎসক হিসেবে প্রথম টিকা নেন মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন, তারপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দিদারুল ইসলাম এবং সেনা বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরান হামিদ।
এছাড়াও প্রথমদিনে চিকিৎসাকর্মী, সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ, খেলোয়াড় ও সাংবাদিকসহ আরও ২৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
টিকা গ্রহণের ১৫ মিনিটের মধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণে তিনি তেমন কোনো ব্যথা পাননি। সাধারণ মানুষের আস্থা তৈরি করতেই প্রথম দফাতেই টিকা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, টিকা গ্রহণের পর একটু ব্যথা, বমি ভাব, হালকা জ্বও হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই এধরণের কোনো লক্ষণে ভীত না হওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) ও মুগদা হাসপাতালে ২৮ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এসব হাসপাতালের ৪শ থেকে ৫শ স্বাস্থ্যকর্মীকে সবার আগে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে প্রতিটি হাসপাতালেই আলাদাভাবে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ২০ জানুয়ারি রবিবার ভারত সরকারের উপহার দেওয়া অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিডশিল্ড দেশে পৌঁছায়। পরদিন সোমবার দেশে আসে বেক্সিমকোর কেনা তিন কোটি টিকার প্রথম ৫০ লাখ ডোজ। এর মধ্যে ৬০ লাখ দেওয়া হবে প্রথম মাসে, দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ, তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ। প্রথম মাসে যারা পাবেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে তৃতীয় মাসে। চুক্তি অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ঢাকা থেকে দেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে টিকা পাঠানো হবে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ভারত থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রমও চালু হয়েছে। আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সুরক্ষা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে যে, কারা টিকা নিতে পারবে আর কারা পারবে না। যারা অ্যাপসের গাইডলাইন মেনে নিবন্ধন করবে বা নিবন্ধন করতে সক্ষম হবে তারা সবাই টিকা পাবে।
এদিকে ঘোষণা অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারী) ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এই পাঁচটি হাসপাতাল হলো- কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা হাসপাতাল। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে টিকা সরবরাহ করা হবে।