1. [email protected] : Administrator :
  2. [email protected] : mukulislam :
  3. [email protected] : newsman :
  4. [email protected] : Osman Goni : Osman Goni
  5. [email protected] : Yousuf :
বিবস্ত্র করে গোপনাঙ্গে কারেন্টের শক দেয় - SHAPLA TELEVISION
June 8, 2025, 8:40 pm

বিবস্ত্র করে গোপনাঙ্গে কারেন্টের শক দেয়

মোঃ ইউছুপ
  • Update Time : রবিবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
  • 65 Time View
M Y

মিথ্যা অভিযোগের মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চেইন দিয়ে একটানা সাড়ে ৩ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হয়। গোপনাঙ্গে দেওয়া হয় কারেন্টের শক। একবার-দুবার নয়, সাতবার গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। জেলে বন্দি রাখা হয় চার বছর। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এমকি জেলে বসে নবজাতক ছেলের মৃত্যুর খবর পান তিন মাস পর।
আওয়ামী শাসনামলে এভাবেই নিপীড়িত হয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের একাংশের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তির জন্য নানাভাবে নির্যাতন করে বলা হয়, ‘তুই আফগানিস্তানে গেছিস, পাকিস্তান গেছিস, তুই জঙ্গি।’ অথচ বাস্তবে এই আলেমের কোনো পাসপোর্টই নেই।
শেখ হাসিনা সরকারের ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মাঠে সোচ্চার ছিলেন মুফতি ফখরুল ইসলাম। এ জন্য সাতবার গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় চার বছর জেলের প্রকোষ্ঠে দিন কেটেছে তার। তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের সময় আলেমদের নির্যাতনের শেষ ছিল না। আলেমদের যেখানেই পেয়েছে গ্রেপ্তার করেছে, জঙ্গি সাজিয়ে মামলা দিয়েছে, তাদের স্বাধীনভাবে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। মসজিদে জুমার খুতবা পর্যন্ত সরকারের ইচ্ছেমতো দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০০৯ সালে রাজধানীর শ্যামলী এলাকা থেকে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে র্যাব-৪ এবং পরে র্যাব ওয়ানে নিয়ে যায় তাকে। সেখানে মাটির নিচে ২০টি রুম ছিল, যা শুধু আলেমদের বন্দি রাখার জন্য তৈরি করা হয়। নিজের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আমার চোখ বাঁধা ছিল ২৪ ঘণ্টা। ছোট একটা রুমে শোয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। হেলান দিয়ে হাত রডের বাইরে দিয়ে হ্যান্ডকাপ লাগানো হয়। বাথরুমের জন্য সময় দেওয়া হতো তিন মিনিট। এ সময় র্যাব আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করত যে, আমি কয়টা ভাষা জানি, কোন কোন দেশ সফর করেছি, আফগানিস্তান গিয়েছি কি না, পাকিস্তানের সঙ্গে কী সম্পর্ক, দল কীভাবে চলে, টাকা পাই কোথা থেকে ইত্যাদি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এসব প্রশ্ন করত। সর্বশেষ বলে যে, এটাকে ৬ নম্বরে নিয়ে ঝোলা। সেখানে গিয়ে দেখলাম, অন্ধকার একটা রুম। ছাদের ওপর দিয়ে চেইন ঝোলানো। পাশে একটা বালতি, বেত ও চেয়ার। আমার হ্যান্ডকাপ খুলে রশি দিয়ে বাঁধল। আর চেইনে আটকে সুইচ টিপে ঝুলিয়ে দিল। সাড়ে ৩ ঘণ্টা আমাকে ঝুলিয়ে রাখে। আমাকে উলঙ্গ করে গোপনাঙ্গে ক্লিপ লাগিয়ে কারেন্টের শক দেওয়া হয়। এই নির্যাতনের কষ্টের কথা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
তিনি জানান, পছন্দমতো কিছু স্বীকারোক্তির জন্যই মূলত তাকে নির্যাতন করা হয়। তাকে জঙ্গি বানাতে চেয়েছিল। তিনি আফগানিস্তান, পাকিস্তান গিয়েছিলেন- এটা বলাতে চেয়েছিল। অথচ তার পাসপোর্টই ছিল না।
২০১২ সালে দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তারের স্মৃতিচারণ করে মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবে সরকারের ইসলামবিরোধী নারী নীতিমালার বিরুদ্ধে একটি প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে পুলিশ হামলা চালায় ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে সেখান থেকে তাকেসহ মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ, মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীসহ প্রায় ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আব্দুল লতিফ নেজামী ও আহমদুল্লাহ আশরাফকে জেলে পাঠায়। মুফতি ফখরুলসহ ৬৩ জনকে এক সপ্তাহের রিমান্ডে নিয়ে যায়। এই দফায় ১৫ দিনের কারাবন্দি থেকে মুক্তির পর ফের গ্রেপ্তার হন মুফতি ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররমে একটি মিছিল কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলাম। জুমার নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই আমাকে ঘেরাও করে ফেলে পুলিশ। ডিসির সঙ্গে কথা বলার বাহানা দিয়ে তারা আমাকে পল্টন থানায় বসিয়ে রাখে। রাত ৯টার দিকে আমাকে গ্রেপ্তার দেখায়। পরে তিন মামলায় আমাকে ২১ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে সবচেয়ে বেশি মানসিক টর্চার করা হতো। আমাকে পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে দিত না। কথা বলতে দিত না। সেখানে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হতো।
মুফতি ফখরুল বলেন, ২০১২ সালে আরেকবার গ্রেপ্তার করে তাকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়। ২৯ দিন পর মুক্তি পান। একই বছরের শেষ দিকে আরেকবার গ্রেপ্তার করে পল্টন থানায় দুদিন রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। এরপর শাপলা চত্বরের ঘটনার পর ২০১৩ সালে তিন মাস বাসায় থাকতে পারেননি তিনি। তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ প্রতিনিয়ত মাদরাসা ও বাসায় হানা দিত। তিন মাস তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে কামরাঙ্গীরচরে হাফেজ্জি হুজুর প্রকাশনীতে বসা অবস্থায় ঘেরাও করে তাকে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। সেখানে সারা দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ১৯ মাস আমি জেল খাটলাম। এ সময় পুরো রমজান মাসে তিন দফায় ২৬ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। ডিবি থেকে জেলখানায় নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি নেয়। তারা হুমকি দেয়, স্বীকারোক্তি না দিলে গাজীপুর শালবনে নিয়ে ক্রসফায়ার দেওয়া হবে, কেউ জানতে পারবে না। শাপলা চত্বরে আমার আপন দুই চাচাতো ভাই শহীদ হয়েছে। অথচ তারা আমাকে দিয়ে বলাতে চায় যে শাপলা চত্বরে কোনো মানুষ মারা যায়নি। আর বাবুনগরীর কাছ থেকে একই ধরনের একটা মিথ্যা ১৬৪ ধারা নিয়ে রেখেছিল, যা পরে মিডিয়ায় প্রচার করে। আমাকে কোর্টে নিয়ে একজন হিন্দু বিচারপতির মাধ্যমে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি নেয় । তাদের লিখিত বক্তব্যে আমার স্বাক্ষর নিয়ে আমার নামে চালিয়ে দেয়।
মুফতি ফখরুল যখন রিমান্ডে, ঠিক তখন তার স্ত্রী ছিলেন সন্তানসম্ভবা। এ সময় ছয় মাস তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না তার স্ত্রীর। তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন পরিবারের লোকজন তা জানত না। এরই মধ্যে তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। কিন্তু চিকিৎসার অভাবসহ নানা কারণে কিছুদিন পর সে মারা যায়। নবজাতক সেই পুত্রসন্তানের মৃত্যুর খবর পান তিন মাস পর। এভাবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে চরমভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।
তিনি বলনে, গ্রেপ্তার করে আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে টর্চার করেছে। রফিকুল ইসলাম মাদানীকে মেরেছে। তাকে হাতিরঝিলে নিয়ে ফতুয়া আর প্যান্ট পরিয়ে সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে টানিয়েছে। একটা বেগানা মেয়ে এনে তার সঙ্গে ভিডিও নাটক করিয়েছে। হাটহাজারীর তৎকালীন এডিসি মুফতি হারুন ইজহারকে পেটাতে পেটাতে অজ্ঞান করে ফেলে। শুধু মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার জন্য এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে মামলা করা, মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য এভাবে নির্যাতন করা হয়।
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে থাকা ও খাবার কষ্টের কথা জানিয়ে মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ কয়েদিরা ১৫ দিন পরপর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। অথচ তাদের সঙ্গে এক মাসের আগে কাউকে সাক্ষাৎ করতে দেয়নি। অন্য কয়েদিদের সপ্তাহে ১০ মিনিট ফোন ব্যবহার করতে দিলেও তাদের তা দেওয়া হয়নি। দোকানে কেনাকাটা করতে দেয়নি। জ্বরে অসুস্থ হয়ে কাতরালেও চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। জেলখানায় সাধারণ সুবিধা থেকেও তাদের বঞ্চিত করেছে। ২০২১ সালে ১৯ মাস জেল খেটে বের হওয়ার চার মাসের মাথায় আবারও গ্রেপ্তার হন মুফতি ফখরুল।
পরিবারের ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি জেলে থাকার কারণে আমার পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। বাচ্চাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্বামী না থাকলে পরিবারের যে ধরনের ক্ষতি হয়, তা হয়েছে। থাকা-খাওয়া-পড়ালেখাÑ সার্বিক দিক থেকে পরিবারের সদস্যরা সমস্যায় পড়েছিল।
মুফতি ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের ওলামাদের জেলে ঢুকিয়ে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে লাগিয়ে ভারতকে খুশি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতকে খুশি করে ক্ষমতার মসনদকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিল তারা। আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। বাংলাদেশে আছে দ্বীনদার-পরহেজগার মুত্তাকি। আমরা সবাই ভাই ভাই, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকি। অথচ একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার আলেমদের ধরে ধরে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ভারতকে খুশি করেছে। আমার বিরুদ্ধেও জঙ্গি মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। অনেকের চেয়ে দেশপ্রেম আমাদের বেশি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
Theme Customized By LiveTV