সচিবালয় হলো বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক সদর দপ্তর। সরকারের সকল নির্বাহী বিভাগীয় কাজ সচিবালয়ে সম্পন্ন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেওয়ার পর বিভিন্ন সময় নানারকম দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়ে আন্দোলনের কারণে আগে থেকেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। এ কারণে কোনও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে দিনের বেলাতেও সচিবালয়ে প্রবেশ অনেকটা দুরূহ বিষয়।
কিন্তু বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ বাইরে থেকে দেখা যায়, ওই ভবনের দুই প্রান্তে আগুন লেগেছে। কিন্তু মাঝখানে কোনও আগুন দেখা যায়নি। পরে আগুন ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। পুরোপুরি নিভে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে। এদিকে ঘটনার পর ভবনের ৮ তলায় একটি কুকুরের পুড়ে যাওয়া দেহ পাওয়া গেছে। কিন্তু সেই কুকুর এত নিরাপত্তা ছাড়িয়ে কীভাবে ৮ তলায় উঠল সেই প্রশ্নও জাগছে জনমনে।
তবে অনেকে বলছেন কোনও সরকারি কর্মকর্তা শখের বসে অফিসে কুকুর পুষেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, কোনও কারণে হয়তো কুকুরটি ভবনে ঢুকে পড়েছিল। তবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
এ বিষয়ে ফায়ার ফাইটার মো. ইমরান শিকদার বলেন, কোনও ভবনে আগুন নির্বাপণ করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুরো ভবন খুঁজে দেখা হয়। কারণ, সেখানে আহত বা নিহত অবস্থায় কেউ থাকতে পারেন। সেই কাজ করার সময় আমরা কুকুরের পুড়ে যাওয়া দেহটি খুঁজে পাই। পরে মৃত কুকুরটি বের করে আনা হয় এবং সেটি ফরেনসিক বিভাগে নেওয়া হয়েছে।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের অফিস অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে: পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয়; অর্থ বিভাগ; আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর সচিবালয়ের চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে, সচিবালয় এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যারিকেড স্থাপন করেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরের পর থেকে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকায় সচিবালয়ের সামনের সড়কগুলোতে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাংবাদিক ছাড়া অন্য কেউ সচিবালয়ের মূল ফটক বা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনের সড়কে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না। জিরো পয়েন্টের সামনে ব্যারিকেড স্থাপন করে সেখানে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র যাচাই এবং তাদের প্রবেশের কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে।
এ সময়, মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশে অবস্থিত ৫ নম্বর গেট ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
অপরদিকে সচিবালয়ে আগুন লাগার পরপরই সচিব নিবাসেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অনেকেই এই দুই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আগুন লাগার ঘটনাকে নাশকতা বলছেন। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সচিবালয়ে সাত নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনাটি ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, কিংবা এর পেছনে নাশকতা আছে কিনা; সেটা তদন্তের আগে বলা যাবে না।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সচিবালয়ের মতো এত সুরক্ষিত একটা জায়গায় কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনা) তো সব জায়গায় হতে পারে। এজন্য তো এক্সিডেন্ট বলে। সচিবালয়ে হতে পারে বলেই তো ভেতরে তো (ফায়ার সার্ভিসের) গাড়ি রাখা হয়।‘
আগুনের উৎসের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস কিছু জানিয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তদন্তের পরে বলতে পারব। এখন কী হচ্ছে… আমরা দেখব। পুরোটা সার্চ করার পরে কিছু পাওয়া যায় কিনা, আমরা জানাব।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিচ্ছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়ার জন্য।’
তিনি জানান, এই ঘটনায় আমাদের একজন ফায়ার ফাইটার নিহত হয়েছেন। উনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। উনি একটা পাইপ নিয়ে সচিবালয়ের দিকে আসছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় একটা ট্রাক তাকে ধাক্কা দেয়। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে পর মারা যান। এছাড়াও আরও দুই-তিন জন সামান্য আহত হয়েছেন। তারা সবাই সুস্থ আছেন।
‘আমরা শুনেছি একইসঙ্গে ভবনের তিন-চার জায়গায় আগুন’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘তিন থেকে চার জায়গায় না। আগুনটা ছয়তলায় লেগেছে এবং এরপর সাত-আট তলা হয়ে উপরের দিকে গেছে। নিচে আর আসতে পারেনি।