স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম :
বছরের শেষে এসে হঠাৎ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্কুল কর্তৃপক্ষ। আর আকস্মিক এই নির্দেশনায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো অবিভাবক। অনেকের পক্ষে এতটাকা একসাথে পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব। অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুলে রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন।
করোনা সংক্রমণের কারণে সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ হয়ে যায় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে। আক্ষরিক অর্থেই স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনও বন্ধ থাকে। এতে করে প্রায় সকল শিক্ষার্থীরই ৯-১০ মাসের বেতন বকেয়া রয়ে গেছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদেরকে সমস্ত বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেয়। অভিভাবকদের কাছ থেকে জানা গেছে, অধিকাংশ স্কুলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সকল বকেয়া বেতন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই নির্দেশনার ফলে শ্রেণিভেদে অনেক অভিভাবককে একসাথে ৩-৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া কোনো পরিবারে একাধিক শিক্ষার্থী থাকলে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে। কোনো কোনো স্কুলে ভর্তি ফি আদায়েরও চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে অনেকের আয় কমে গেছে। কাজ হারিয়েছেন অনেকে। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে জীবন-যাপনই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে হঠাৎ করে স্কুলে বেতন আদায়ের ঘোষণায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, আমরা ভেবেছিলাম যেহেতু স্কুল বন্ধ আছে, তাই বেতন মওকূফ অথবা আংশিক নেয়া হবে। কিন্তু এখন সমস্ত বেতন পরিশোধ করতে হবে জানার পর চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। কয়েকজন জানান, হয়তো সন্তানকে পড়ালেখা থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ নি¤œবিত্ত এবং অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের মাসে মাসে বেতন পরিশোধ করাই অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এরমধ্যে একসাথে বেতন পরিশোধ করা তাদের পক্ষে অসম্ভব।
স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষা বিভাগ থেকে বেতন নেয়ার নির্দেশনা দেয়ার পরই অবিভাবকদেরকে বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এব্যাপারে স্কুলের নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া শাপলা টেলিভিশনকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেবল মাসিক বেতন নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ভর্তি ফি বা এধরণের অন্য কোনো ফি আদায়ে নিষেধ রয়েছে। এধরণের অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সমস্ত বেতন একসাথে আদায়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হয়নি। কারও পক্ষে একসাথে দেয়া অসম্ভব হলে তাদেরকে ধাপে ধাপে বেতন পরিশোধের সুযোগ দেয়া হবে। জোর করে টিউশন ফি আদায়ের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সুমন বড়–য়া বলেন, কোনো শিক্ষার্থী পুরো বেতন না দিতে পারলে অথবা একেবারে অপারগ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক বরাবরে আবেদন করতে পারবে। আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রশাসক মহোদয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে ধাপে ধাপে পরিশোধের ধরণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট করে দ্রুত নির্দেশনা জারি করা না হলে অভিভাবকদের হয়রানির আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। করোনা সংকটকালে সিটি কর্পোরেশন কিংবা সরকার থেকে ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বেতনের কিছু অংশ মওকূফ করা যায় কিনা সেব্যাপারে ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করেন অভিভাবকমহল। আর পুরো বেতন আদায়ের কারণে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞজনেরা।