যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে পুড়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ। তবে এখনও আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে চলেছে সবকিছু। এর মধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রচণ্ডগতিতে বয়ে চলা ঝড়। এতে হুহু করে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। দাবানলে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এদিকে, দাবানলে বিপর্যস্ত লস অ্যাঞ্জেলেসে লুটপাটের খবর পাচ্ছেন জানিয়ে স্থানীয় বোর্ড অব সুপারভাইজারসের প্রধান ক্যাথরিন বার্জার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। দুর্বৃত্তরা পরিত্যক্ত ওই বাড়িগুলোয় লুটপাট চালাচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনোদন জগতের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেসে এ দাবানলের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত সেখানে ছয়টি আলাদা দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। এতে মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বহুমূল্যের ঘর ও গাড়ি। আলাদা ছয়টি দাবানলের মধ্যে তিনটি নিয়ন্ত্রণের পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অন্তত ৩ লাখ ১১ হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাই প্রাণে বাঁচতে লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সময় আরও বাড়ানো হতে পারে।

দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোর মধ্যে আগুনের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে অভিজাত এলাকা প্যাসিফিক প্যালিসেইডসে। সেখানে ১৫ হাজার ৮৩২ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। এই এলাকার একটি বাড়িতে ১৯৭৯ সাল থেকে বসবাস করে আসছেন হলিউডের তারকা অভিনেতা বিলি ক্রিস্টাল। আগুনে সেটিও পুড়ে গেছে। আগুন ছড়িয়েছে হলিউড হিলসেও।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেলিভিশনে নিজের বাড়ি আগুনে পুড়তে দেখেছেন অভিনেত্রী প্যারিস হিলটন। তিনি বলেন, আমার মন ভেঙে গেছে।

আর অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেমি লি কার্টিস ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, আমার এলাকায়, সম্ভবত আমার বাড়িতেও আগুন লেগেছে। আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন।

৫০ বিলিয়ন (৫ হাজার কোটি) ডলারের ক্ষতি হয়েছে দাবি করে অ্যাকুওয়েদারের প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার বলেন, সামনের দিনগুলোতে আরও অবকাঠামো আগুনে পুড়ে যেতে পারে। এমনটি হলে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক দিয়ে এই দাবানল ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হতে যাচ্ছে। এই আগুনের ফলে অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, লোকজন চাকরি হারাবে, আর ধোঁয়ার প্রভাবে চিকিৎসা খরচ বাড়বে।

ক্যালিফোর্নিয়ার পানি সংকট নিয়ে চটেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সরকার অযোগ্য। এই পানিসংকটের কারণে আগুন নেভানোয় বাধা আসছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগুন নেভাতে যা যা দরকার সব করবে সরকার।