1. [email protected] : Administrator :
  2. [email protected] : mukulislam :
  3. [email protected] : newsman :
  4. [email protected] : Osman Goni : Osman Goni
  5. [email protected] : Yousuf :
সিরিয়ায় তুরস্কের ‘বিজয়’ কতটা সুফল দেবে? - SHAPLA TELEVISION
June 7, 2025, 6:51 pm

সিরিয়ায় তুরস্কের ‘বিজয়’ কতটা সুফল দেবে?

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
  • 68 Time View

‘সিরিয়ার জনগণের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। এই পরিক্রমায় আঙ্কারা তাদের সঙ্গে থাকবে’—এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তুরস্কের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দাউদওগলু। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে তিনি জেনেভায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াকে নিয়ে যে ‘উজ্জ্বল’ ভবিষ্যতের বাণী দিয়েছিলেন কালের কষ্টিপাথরে এখন তা কতটা প্রোজ্জ্বল?

নির্মম হাতে বিরোধীমত দমন ও বিরোধীদের নির্যাতনের সব পথ খোলা রেখেও নিজের পরাজয় ও পতন ঠেকাতে পারেননি সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ। সব সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে অন্য অনেক একনায়কের মতো তিনিও পালালেন সপরিবারে। পেছনে রেখে গেলেন বিধ্বস্ত দেশ ও অর্থনীতি।

বিদেশিদের ষড়যন্ত্র প্রতিহতের দোহাই দিয়ে বাশার-বাহিনী নিলো হাজারো মানুষের প্রাণ। গৃহহীন করলো লাখো মানুষকে। নিজ দেশকে বানালো ‘বারো ভূতের’ আস্তানায়।

‘সহোদর’ থেকে শত্রুতা
বাশারবিরোধী আন্দোলনের জেরে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের অনেক অনেক আগে থেকেই সুন্নিপ্রধান সিরিয়ার সঙ্গে সুন্নিপ্রধান তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। দেশটির সঙ্গে আছে দীর্ঘ সীমান্ত। চলতি শতাব্দীর শুরুতে ক্ষমতায় আসা রেসিপ এরদোয়ান গুরুত্ব দেন এই প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে। তিনি বাশার আল আসাদকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিলেন যেন তারা দুই ‘সহোদর’। ২০০৪ সালে বাশারের আঙ্কারা সফরের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান দামেস্কে এসে সই করেছিলেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।

শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন একে পার্টি সিরিয়ার সঙ্গে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল সামরিক সহযোগিতা। এ কথা সবার জানা, তুরস্কের বাইরে একমাত্র সিরিয়াতেই আনুষ্ঠানিকভাবে তুর্কি সেনা থাকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের পিতামহ সুলাইমান শাহের কবর পাহারায়।

বাশার আল আসাদের পতন
বাশার-পরবর্তী সিরিয়ায় যা ঘটতে পারে
আরব বসন্তের জেরে বাশারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে এর প্রভাব পড়ে তুরস্কেও। বাশার-বন্ধু এরদোয়ান যেন গণতন্ত্রকামীদের কণ্ঠরোধে সিরিয়ার সরকারকে সহায়তা না দেন সেই আওয়াজ উঠেছিল ইস্তানবুলসহ দেশটির প্রায় সব শহরেই। নিজ দেশের জনদাবির কাছে হার মেনে সিরিয়ানীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয় আঙ্কারা সরকার।

সময়ের পরীক্ষায় ‘সহোদর’ হয়ে যায় ‘শত্রু’। এই শত্রুতা এত দূর গড়ায় যে বাশারবিরোধী সামরিক জোটে নাম লেখাতে হয় তুরস্কের সেনাবাহিনীকে। সুযোগ বুঝে সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে কুর্দিপ্রধান অঞ্চল নিজেদের স্বশাসনের ঘোষণা দেয়। তারা যেন তুরস্কের অখণ্ডতায় হুমকি হয়ে না উঠে তাই সেখানে ঘাঁটি গড়ে তুর্কি সেনারা। আন্তর্জাতিক নিয়মকে তোয়াক্কা না করে সিরিয়ার মাটিতে তুরস্ক এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠে, তা দেখে অনেকের মনে হয়েছিল—এ যেন ‘বাশার-এরদোয়ানের ইজ্জতের লড়াই’।

বিপদের বন্ধু ইরান
তেহরান-তেল আবিবের তিক্ততার পটভূমিতে এরদোয়ানের তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যে আবির্ভূত হয় নতুন নেতৃত্ব নিয়ে। সব কূল বজায় রেখে চলার তুর্কি পররাষ্ট্রনীতি হোঁচট খায় সিরিয়ার রণাঙ্গণে। আঙ্কারাকে বেছে নিয়ে হয় এক কূল। আর তা হচ্ছে—বাশারবিরোধিতা।

এমন পরিস্থিতিতে সমাজতান্ত্রিক ও শিয়াঘনিষ্ঠ বাশারের বিপদের বন্ধু হয়ে উঠে ইরানের বিপ্লবী বাহিনী। ‘দায়েশ’ দমনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এই একনায়ককে আপন করে নেন তেহরানের আয়াতুল্লাহরা। দামেস্কের প্রধান মসজিদে আলাওয়াইত মতাবলম্বী বাশার আল আসাদকে নিয়ে নামাজ পড়ার ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রচার করে ইরানের ধর্মীয় নেতারা ‘পাশে থাকার’ বার্তা দেন বিশ্ববাসীকে।

শুধু তাই নয়, জনবিচ্ছিন্ন বাশার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ইরান গড়ে তোলে সিরীয় হিজবুল্লাহ। উদ্দেশ্য, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মতো সিরিয়াতেও শক্তিশালী আধা সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা। তেহরান ভেবেছিল—এক ঢিলে দুই পাখি মারার এ এক সুবর্ণ সুযোগ। অর্থাৎ, বাশারকে ক্ষমতায় রাখার পাশাপাশি তেল আবিবকে বাড়তি চাপে রাখা।

সিরিয়ায় শান্তি ফেরাতে দুই আঞ্চলিক মিত্র ইরান ও তুরস্ককে নিয়ে রাশিয়া ক্রমাগত চেষ্টা করলেও তা বেশি দূর এগোয়নি। সিরিয়ায় ইরানের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া মানে তুরস্কের গুরুত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা। আঙ্কারা সেই ঝুঁকি কখনোই নিতে চায়নি। করেছে দ্বিচারিতা। বলেছে—সিরিয়ায় বাশার সরকার থাকলে তুরস্কের সীমান্তে দখলে রাখা শহর-গ্রামে থাকবে তুর্কি সেনাও। সিরিয়ার ভূখণ্ড বিবদমান সব গোষ্ঠীর কাছে ভাগের ‘পিঠা’ হয়ে উঠলে সেই বাস্তবতাকে মেনে নিতে হয় বাশার ও মিত্রদেরও।

বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেশী ইরান ও তুরস্কের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও এ বিষয়ে ইসরায়েল ও তুরস্কের মত পার্থক্য অনেক কম। বেশ কয়েক দশক ধরে পাওয়া ইসরায়েলি সহায়তায় তুরস্কের সেনাবাহিনী যে দক্ষতা অর্জন করেছে তার সুফল মেলে সিরিয়ার মাটিতে।

সব বাস্তবতা মেনেই ইরান হয়েছিল সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ। হয়েছিল বাশারের ‘বিপদের বন্ধু’। তবে এর সঙ্গে ছিল মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের অবস্থানকে আরও জোরদার করার স্বার্থ।

বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু–রাশিয়ার পুতিন ও সিরিয়ার আসাদ।
আসাদকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে রাশিয়ায় আনা হয়েছে’
তুরস্কের ‘বিজয়’ কতটা সুফল দেবে?
গতকাল মঙ্গলবার প্রভাবশালী তুর্কি গণমাধ্যম ‘হুরিয়াত’ জানায়—তুরস্কের ব্যবসায়ীরা সিরিয়ায় সুযোগ খুঁজলেও আসাদের পতনে আছে অনেক ঝুঁকি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৮ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদের পতনের পরদিন তথা গত সোমবার থেকেই তুরস্কের অবকাঠামো শিল্পে চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে বাড়িঘর নতুন করে গড়ে তোলার আশায় সিরীয়রা রড-সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।

আপাতত এক তরফা হলেও দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য হু হু করে বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন তুরস্কের ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য বিশ্লেষক জামাল দামিরতাশ গণমাধ্যমটিকে বলেন, ‘তুরস্ক-সিরিয়ার বাণিজ্য নতুন মাত্রা পাবে। তুরস্কের ইস্পাত শিল্প উপকৃত হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সিরিয়ায় রড-ইস্পাতের চাহিদা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে এসবের দাম কত হবে এসবের ওপর।’

তুরস্কের পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ২০১০ সালে সিরিয়ার সঙ্গে দেশটির দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার। বাশারবিরোধী আন্দোলন শুরুর পরের বছর বা ২০১২ সালে তা কমে হয় ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার। এরপর শুধু কমতেই থাকে।

গৃহযুদ্ধের পর লাখ লাখ সিরীয় প্রতিবেশী তুরস্কে আশ্রয় নেয়। দেশটিতে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৩২ লাখ। অনিবন্ধিত আছেন আরও কয়েক লাখ। বিদেশভূমিতে তাদের সবার কপালে সুখ জোটেনি। তুরস্কের জনমনে শরণার্থীবিরোধী মনভাব প্রবল। ঘটেছে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনাও। সাময়িক আশ্রয় শেষে দলে দলে সিরীয়রা নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

শরণার্থীদের অনেকের মনে তুরস্কপ্রীতির পরিবর্তে জন্মেছে তুরস্কভীতি। শরণার্থী হওয়ার অপমান-যন্ত্রণা ও সিরিয়ায় তুরস্কের আগ্রাসী ভূমিকা বিপ্লব-পরবর্তী দেশটির সামগ্রিক রাজনীতিতে বিপরীত ফল দিতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। এ ছাড়াও, জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিশাল অংশ বহু বছর ধরেই তুরস্কবিরোধী। সিরিয়ার নতুন সরকার তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করেছে। এমন সিদ্ধান্তে নাখোশ আঙ্কারা।

গত ৮ ডিসেম্বর তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তারা সিরিয়ায় বাশারবিরোধী অভিযানে তাদের দেশের জোরালো ভূমিকা নিয়ে প্রচারণার তীব্র বিরোধিতা করেছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মুখপাত্র ওমর জালিক বলেছেন, ‘সিরিয়াকে ঘিরে তুরস্ককে নিয়ে যেসব তথ্য প্রচারিত হচ্ছে তা অসত্য। ডাহা মিথ্যা।’

এপির সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতন তুরস্ককে ঝুঁকিতে ফেলবে। ইস্তানবুলভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড ফরেন পলিসি স্টাডিজের পরিচালক সিনান উলগেন বলেছেন, ‘প্রথম ঝুঁকি হচ্ছে—সিরিয়ার ভৌগোলিক বিভাজন। অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠী (সিরিয়ার কুর্দিস্তানে) স্বশাসন কায়েম করতে চায়।’

তিনি মনে করেন, সিরিয়ার কুর্দিরা ‘বিশেষ সুবিধা’ পেলে একই দাবি তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলেও পড়বে। এতে দেশটির স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

আগামীতে বাশার-পরবর্তী সিরিয়ার অবস্থা যদি লিবিয়া বা ইয়েমেনের মতো হয় তাহলে ‘সিরিয়ার জনগণের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে’—আহমেদ দাউদওগলুর সেই আশার বাণী কি বিফলে যাবে না? প্রতিবেশী তুরস্কের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না? বাশার-পরবর্তী সিরিয়াকে বাণিজ্যের যে ‘স্বর্গভূমি’ ভাবা হচ্ছে তা উবে যাবে না তো?

তাই, সিরিয়ায় তুরস্কের আপাত ‘বিজয়’ কতটা সুফল দেবে—সেই প্রশ্ন থাকলো ভবিষ্যতের হাতেই।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
Theme Customized By LiveTV