৩ মে সোমবার (আজ) সকালে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের পদ্মা নদীর কাঁঠালবাড়ীতে স্পিডবোট ডুবে যাওয়ার ঘটনায় বিকেল পর্যন্ত ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়নি। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালেও অনুসন্ধান চালানো হবে।
জানা গেছে, সর্বশেষ সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে একজনের মরদেহ হস্তান্তরের মাধ্যমে ওই দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জনের মরদেহ তাদের স্বজনরা বুঝে নিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের পিতা, মাতা এবং দুই কন্যা সন্তানও রয়েছেন। এরা হলেন- খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারুফল এলাকার মৃত আলম মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৩৮), মনির মিয়ার স্ত্রী হেনা বেগম (৩৬), তাঁদেও মেয়ে রুমি আক্তার (৩) ও সুমি আক্তার (৫)।
দুর্ঘটনায় নিহত অন্যান্য হতভাগ্যরা হলেন- মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মৌলতীকান্দি এলাকার আজিত মোল্লার ছেলে আলম মোল্লা (৩৮), একই উপজেলার গুয়াতলা এলাকার আদম আলী মোল্লার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৪২), রাজৈর শঙ্কারদি এলাকার তারা মিয়া মীরের ছেলে তাহের মীর (৩০), সদর উপজেলার শ্রীনদী এলাকার আবদুল মান্নান মোল্লার ছেলে আবদুল আহাদ (৩০), ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার মাইগ্রো এলাকার মৃত পান্নু সরদারের ছেলে আরজু সরদার (৪০) এবং আরজুর দেড় বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন, বরিশালের বন্দর থানার তেদুরিয়া এলাকার মো. আলী আহমেদের ছেলে আনোয়ার চৌকিদার (৫০), বানারীপাড়া উপজেলার হাশেম ব্যাপারীর ছেলে আলাউদ্দিন ব্যাপারী (৪৫), চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার মোহনপুর এলাকার মৃত আলী হোসেন ব্যাপারীর ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে জোবায়ের মোল্লা (৩০), কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ইউসুফপুর এলাকার মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৮), দাউদকান্দি উপজেলার মাইখারকান্দি এলাকার মৃত আবদুল হাশেমের ছেলে মো. কাওসার আহমেদ (৪০), একই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৩৬), মুন্সিগঞ্জের সাতপাড় এলাকার চান মিয়া শেখের ছেলে সাগর শেখ (৪১), বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আশা এলাকার রত্তু হোসেনের ছেলে সাইদুল হোসেন (২৭), একই উপজেলার পূর্বষট্টি এলাকার সাদেক ব্যাপারীর ছেলে রিয়াজ হোসেন (৩৩) ও সাইফুল ইসলাম (৩৫), একই উপজেলার মনির হোসেন (৩৫), ঢাকার পীরেরবাগ এলাকার নুরে আলমের ছেলে খোরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রাজাবাড়িয়া এলাকার মৃত আবদুল কুদ্দুস শিকদারের ছেলে নাসিরউদ্দিন (৪৫), পিরোজপুর জেলার সদর উপজেলার চরখানা এলাকার মো. ওহিদুরের ছেলে বাপ্পী (২৮) এবং পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পসারিয়াবুনিয়া এলাকার রঞ্জন অধিকারীর ছেলে জনি অধিকারী (২৬)।
এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত স্পিডবোটের চালককে আটক করা হয়েছে। শিবচর থানা সূত্রে জানা গেছে, স্পিডবোটের চালক শাহ আলমকে গুরুতর আহত অবস্থায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ প্রহরায় তাকে ফরিদপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
শিবচর থানার ওসি মো. মিরাজ হোসেন জানান, সোমবার (আজ) বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলেছে। যদিও ২৬ জনের পরে আর কোনো মরদেহ উদ্ধার হয়নি। তবে ফায়ার সার্ভিস মঙ্গলবার সকালেও আরেক দফা উদ্ধার অভিযান চালাবে।
এর আগে সোমবার ভোরে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী একটি স্পিডবোট বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সকাল ৭টার দিকে স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ী (পুরাতন ফেরিঘাট) ঘাটের কাছে এলে নদীতে থাকা একটি বালিবাহি বাল্কহেডের পেছনে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস সকাল ৯টার মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছিলো।