আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
মঙ্গলবার লেবাননের বৈরুত সমুদ্র বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই বন্দরের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি।
লেবাননের তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদ বলেছেন, গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৈরুত বন্দরের সব কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে গৃহবন্দীর পদক্ষেপ কার্যকর হবে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্রবন্দর এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। পোর্ট অব বৈরুতের একটি গুদামে এই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৩৫ জনের মৃত্যুর তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যাদের মধ্যে অন্তত ৪ বাংলাদেশীও রয়েছেন। আহত চার হাজারের বেশি মানুষ। বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ মানুষের খোঁজে তৎপরতা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। বিস্ফোরণের কারণে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিস্ফোরণে রাজধানী বৈরুত ও আশপাশের এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিস্ফোরণে ঘরবাড়ি হারিয়েছে ৩ লাখের বেশি মানুষ। ক্ষতি হয়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুর্ঘটনার পর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা দেশটি আরও গভীর সংকটে পড়বে।
লেবানন সরকার জানিয়েছে, কী থেকে কীভাবে এই ভয়ানক বিস্ফোরণ, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন জানিয়েছেন, বন্দর লাগোয়া একটি গুদামে ২ হাজার ৭৫০ টনের মতো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা ছিল। বন্দর এলাকায় প্রথমে কোনো কারণে আগুন লাগে। সেই আগুন পৌঁছে যায় ওই গুদামে। গুদাম থেকে ঘটে বিস্ফোরণ।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহৃত হয় মূলত কৃষিকাজের সার তৈরিতে। এটা নিজে বিস্ফোরক নয়। কিন্তু বিস্ফোরক তৈরির অন্যতম উপাদান। গুদামজাত করতে হয় অতি সাবধানে।
দেশটির শুল্কপ্রধানের ভাষ্য, তাঁর সংস্থা এই রাসায়নিক সরাতে বলেছিল। কিন্তু তা সরানো হয়নি।
লেবাননের সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল বলেছে, এই বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
বিস্ফোরণের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লেবাননে দুই সপ্তাহের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে বৈরুত বন্দর এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণস্থল ও তার আশপাশের এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন দৃশ্য তাঁরা আগে দেখেননি। সেখানকার হাসপাতালগুলো আহত লোকজন দিয়ে ঠাঁসা।
এদিকে বিস্ফোরণে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত চারজন বাংলাদেশি নিহত এবং ৯৯ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে সেখানকার বাংলাদেশী দূতাবান। আহতদের মধ্যে প্রবাসী কর্মী ৭৮ জন এবং অন্য ২১ জন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, চার বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস নিশ্চিত হতে পেরেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মেহেদী হাসান রনি ও কসবার রাসেল মিয়া, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মিয়ার হাটের মিজান এবং কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার রেজাউল। তিনি আরও জানান, নিহতরা দেশটিতে বৈধ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
লেবাননে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বৈরুতের দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই বাংলাদেশি মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। হাসপাতালে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। আহতদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিস্ফোরণস্থলের দুই শ গজের মধ্যে মোতায়েন করা ছিল নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। বিস্ফোরণের পরপরই দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছাই। বৈরুত বন্দরে মোতায়েন করা জাহাজ বিএনএস বিজয়-এর কাছে গিয়ে জাহাজটির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলি। তখন আমরা দেখতে পাই, জাহাজের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আর নাবিকসহ নৌবাহিনীর অন্তত ১৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত নৌবাহিনীর সদস্যের মাথায় আঘাত লেগেছে। তাদের দ্রুত আমেরিকান হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যজনের অবস্থা গুরুতর থাকায় তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভয়াবহ বিস্ফোরণে গতকাল কেঁপে উঠে বৈরুত বন্দর। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের দৃশ্য। ছবি : এএফপি