শিশু আছিয়ার ধর্ষণকারীদের ফাঁসি কার্যকর, দেশব্যাপী ধর্ষণ প্রতিরোধ, ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত এবং নারীসহ সকল নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বাদামতলা, প্রধান ফটক ও ঘোড়াপীর মাজার এলাকা প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে, আমি কে, আছিয়া আছিয়া’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আমার সোনার বাংলায় ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’ এবং ‘এক, দুই, তিন, চার—জাহাঙ্গীর, তুই গদি ছাড়’—এমন নানা প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন।
নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে রাজপথে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিম খান বলেন, দেশে এমন একজন আইন উপদেষ্টা রয়েছেন, যিনি টকশোতে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারেন কিন্তু বাস্তবে এখনো কোনো দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে পারেননি। আট বছরের শিশু আছিয়ার ধর্ষকদের সর্বনিম্ন শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি ধর্ষণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে, যাতে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত না হয়। অন্যথায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ব্যর্থতা ও অদক্ষতা উল্লেখ করে তার পদত্যাগের দাবিও জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদা নূরী বলেন, বর্তমানে দেশে ধর্ষণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স কোনো বাধা নয়—আট বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। সমাজের কিছু মানুষের বিবেক এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, তারা নারীদের প্রতি মানবিক আচরণ করতে ভুলে গেছে। ধর্ষণের ঘটনা যদি এমনই চলতে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
ধর্ষকদের সমাজের কলঙ্ক আখ্যা দিয়ে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিক বলেন, এদের কোনো মানবিকতা নেই, এরা অমানুষ! এমন জঘন্য অপরাধের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়। রাষ্ট্রের উচিত কঠোর আইন প্রয়োগ করা, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা এবং অপরাধীদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং শিশুদের জন্য এমন নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে তারা নির্ভয়ে বেড়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে চলমান নৈরাজ্য, নারী ও শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন গবি শিক্ষার্থীরা।