1. [email protected] : Administrator :
  2. [email protected] : mukulislam :
  3. [email protected] : newsman :
  4. [email protected] : Osman Goni : Osman Goni
  5. [email protected] : Yousuf :
ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন পবিত্র আশুরা - SHAPLA TELEVISION
June 7, 2025, 10:06 pm

ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিন পবিত্র আশুরা

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, আগস্ট ৩০, ২০২০
  • 693 Time View
পবিত্র আশুরার বিশেষ নিবন্ধ

এমরানুল ইসলাম মুকুল :
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২। যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত ৩৬)। সেই চারটি মাসের অন্যতম হলো মহররম। এটি হিজরী সনের প্রথম মাস। অপরদিকে আরবী শব্দ মহররম এর অর্থ হলো- মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। আরেকটি অর্থ পবিত্রতম। এই নামের মধ্যেই মহররমের মাহাত্ম ফুটে উঠেছে। আর পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে ঘটে যাওয়া সর্বশেষ কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার কারণে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে ১০ই মহররম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১০ এর আরবী শব্দ আশরা। আশরা থেকে এসেছে আশুরা। (তথ্যসূত্র সংগৃহিত)। আজ ৩০ আগস্ট পবিত্র আশুরা।
মহান আল্লাহ ঘোষিত এবং রাসুল (সা.) কর্তৃক প্রতিপালিত চারটি সম্মানিত মাসের প্রথম মাস মহররম। এই মাসটিকে আরবের অন্ধকার যুগেও বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হতো। শরিয়তের দৃষ্টিতে যেমন এ মাসটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি এই মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও অনেক দীর্ঘ। ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী এই মহররম মাস। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসে। শুধু উম্মতে মুহাম্মদীই নয়, বরং পূর্ববর্তী অনেক নবীর উম্মত ও নবীদের অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই মাসে।
অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত রয়েছে মহররম মাসকে ঘিরে। দীর্ঘদিন থেকে এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল, এসব কারণেই এ মাসটি মর্যাদাপূর্ণ। তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে মহররম (যা আশহুরে হুরুমের অন্তর্ভুক্ত তথা নিষিদ্ধ মাস) বা মর্যাদাপূর্ণ মাস।
সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহ তায়ালা ১২টি মাস নির্ধারণ করে দেন। তন্মধ্যে চারটি মাস বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, এক বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এর মধ্যে তিন মাস ধারাবাহিকভাবে (জিলক্বদ, জিলহজ ও মহররম) এবং চতুর্থ মাস মুজর গোত্রের রজব মাস। (বুখারি শরীফ, হাদিস নং ৪৬৬২, মুসলিম শরীফ, হাদিস নং ১৬৭৯)।

মহররম মাসের ফজিলত জানার পর এবার আমরা আসি ১০ই মহররম অর্থাৎ পবিত্র আশুরা’র আলোচনায়। মহররম মাস সম্মানিত হওয়ার মধ্যে বিশেষ একটি কারণ হলো আশুরা। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ও হৃদয়বিদারক কাহিনী। অনেক ইসলামী স্কলারের মতে মহররমের ১০ তারিখে অন্তত ১০ জন নবী ও রাসুলের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১০টি ঘটনা ঘটেছে। তাই এই দিনকে আশুরা নাম দেয়া হয়েছে। তবে আশুরার দিনটি যে মানব সভ্যতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ; এব্যাপারে প্রায় সকলেই একমত আছেন।
আশুরার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘটনা হলো ফেরাউনের অত্যাচার থেকে হযরত মুসা (আ.)-এর নিষ্কৃতি লাভ। এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা চিরকালের জন্য সাগরে ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদার দাবিদার ফেরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে। তাকে সাগরে ডুবিয়ে বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দেওয়া হয়।
ইমাম বুখারি তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেন- ‘হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন হিজরত করে মদিনা পৌঁছেন, তখন তিনি দেখলেন যে মদিনার ইহুদি সম্প্রদায় আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, আশুরার দিনে তোমরা রোজা রেখেছ কেন? তারা উত্তর দিল, এই দিনটি অনেক বড়। এই পবিত্র দিনে মহান আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন আর ফেরাউন ও তার বাহিনী কিবতি সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হযরত মুসা (আ.) রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। তাদের উত্তর শুনে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, হযরত মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং উম্মতকে তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন। (বুখারি-৩৩৯৭, মুসলিম-১১৩৯)
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে প্রতিভাত হয়- হযরত মুসা (আ.) অভিশপ্ত ফেরাউনের কবল থেকে আশুরার দিন রক্ষা পেয়েছিলেন। তা হাদিসের প্রায় সব গ্রন্থেই (বুখারি, মুসলিমসহ) পাওয়া যায়। উল্লিখিত হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, আশুরার ঐতিহ্য আবহমানকাল থেকে চলে আসছে।
কেউ কেউ আশুরার ঐতিহ্য বলতে রাসুল (সা.)-এর প্রিয়তম দৌহিত্র, জান্নাতের যুবকদের দলপতি হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত ও নবী পরিবারের অনেক সম্মানিত সদস্যের রক্তে রঞ্জিত কারবালার ইতিহাসকেই বুঝে থাকেন। তাদের মতে, কেবল কারবালার ইতিহাসকে ঘিরেই আশুরার সব ঐতিহ্য, এতেই রয়েছে আশুরার সব রহস্য।
যদিও হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয় যে, আশুরার ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। হযরত হুসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনার অনেক আগ থেকেই আশুরা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যঘেরা দিন। কারণ কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ মহররম। আর আশুরার রোজার প্রচলন চলে আসছে ইসলাম আবির্ভাবেরও বহুকাল আগে থেকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে আবহমানকাল থেকে আশুরার দিনে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা যেমন অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি হিজরি ৬১ সনে আশুরার দিন কারবালার ময়দানের দুঃখজনক ঘটনাও মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক। প্রতিবছর আশুরা আমাদের এই দুঃখজনক ঘটনাটিকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
ইসলামের ইতিহাসে এই দিনটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, এই দিনে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন। এই দিন নবী মুসা (আ.) এর শত্রু ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। নূহ (আ.) এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো এবং তিনি জুডি পর্বতশৃংগে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। এই দিনে দাউদ (আ.) এর তওবা কবুল হয়েছিলো। নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুসলিম জাতর পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) উদ্ধার পেয়েছিলেন। আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন। এদিনে আল্লাহ তা’আলা ঈসাকে (আ.) ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া কারবালার মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের করুণ ইতিহাসতো সর্বজন বিদিত। এই আশুরার দিনেই শহীদ হয়েছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় নাতি ইমাম হুসাইন (রা.)। কারবালার ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে- হিজরী ৬০ সনে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা ঘোষণা করেন। তার সম্পর্কে বলা হয় যে, সে মদ্যপানকে বৈধ ঘোষণা করেছিল। অধিকন্তু সে একই সঙ্গে দুই সহোদরাকে বিয়ে করাকেও বৈধ ঘোষণা করেছিল। শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ইমাম হুসাইন ইয়াজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন। মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে ইয়াজিদের চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয়৷ কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং ইমাম হোসাইনকে জোরপূর্বক যুদ্ধ করতে বাধ্য করে। এই অসম যুদ্ধে ইমাম হোসাইন এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদাৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে ইমাম হোসাইনকে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে হত্যা করে। সেদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মুহররম।
তাই এই দিনটিকে শোকের দিন হিসেবেও গণ্য করা হয়। তবে নিছক শোক প্রকাশে আবদ্ধ না থেকে ইমাম হোসাইন (রা.) যে উদ্দেশ্যে কারবালার ময়দানে নিজের মূল্যবান জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের এই দিনে সেই উদ্দেশ্য ও আদর্শ বাস্তব জীবনে অনুসরণ করাই হবে এ ঘটনার সঠিক মর্ম অনুধাবনের বহিঃপ্রকাশ এবং হযরত হোসাইন (রা.)-ও রাসুল করিম (সা.)-এর প্রতি মুহব্বত ও আন্তরিকতার একমাত্র পরিচায়ক।
মহররম মাসে রোজা রাখা সম্পর্কে অনেক বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষভাবে আশুরা, অর্থাৎ মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর ফরজ ছিল। পরবর্তী সময়ে ওই বিধান রহিত হয়ে যায় এবং তা নফলে পরিণত হয়। হাদিস শরিফে হযরত জাবের (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে- ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না। (মুসলিম শরিফ-১১২৮)।
ওই হাদিসের আলোকে আশুরার রোজার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতীয়মান হয়। এই রোজা যদিও নফল, কিন্তু অন্যান্য নফল রোজার তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতেন, অন্য কোনো রোজা সম্পর্কে সেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন না। (বুখারি ও মুসলিম)। হযরত হাফসা (রা.) সূত্রে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল (সা.) চারটি কাজ কখনো ছেড়ে দিতেন না। তার মধ্যে একটি আশুরার রোজা। (নাসায়ি শরিফ)। হযরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, আশুরার দিন ইহুদিরা ঈদ পালন করত। রাসুল (সা.) সাহাবিদের সেদিন রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন। (বুখারি-২০০৫, মুসলিম-১১৩১)। হযরত ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে একটি হাদিস বর্ণিত আছে, জাহিলিয়াতের যুগে কাফেররা আশুরার দিন রোজা রাখত। তাই রাসুল (সা.) ও সাহাবায়েকেরামও সেদিন রোজা রাখতেন; কিন্তু যখন রমজানের রোজা ফরজ হয়, তখন তাঁদের রোজা রাখা না রাখার ব্যাপারে স্বাধীনতা প্রদান করা হয়। (মুসলিম-১১৩৬)।
অন্ধকার যুগে কাফেররা মহররমের ১০ তারিখে কাবা শরিফে গেলাফ পরিধান করাত; সম্ভবত এই কারণে কাফেররা আশুরার দিন রোজা রাখত। যেমনটি বুখারি শরিফে রয়েছে (হাদিস নম্বর : ১৫৮২)।
হযরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত আছে, প্রশ্ন রয়ে যায়, তারা গেলাফ পরিধান করানোর জন্য ওই দিনকে কেন নির্দিষ্ট করেছিল? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিখ্যাত তাবেয়ি হযরত ইকরামা (রা.) বলেন- অন্ধকার যুগে কাফেররা একটি অনেক বড় অপরাধ (তাদের দৃষ্টিতে) করে বসে। তাদের বলা হলো, তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো, তাহলে তোমাদের গুনাহ মাফ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন থেকে কোরাইশ বংশের লোকেরা সেদিন রোজা রাখতে শুরু করে। (ফতহুল বারি, খন্ড-৪ পৃ.-৭৭৩)
আশুরার দিনে রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রোজা নিজে পালন করেছেন এবং উম্মতকে রাখার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। তাই এর পূর্ণ অনুসরণ ও আনুগত্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে উম্মতের কল্যাণ। এ ছাড়া অসংখ্য হাদিসে আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু কাতাদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম-১১৬২)। রাসুল (সা.) বলেন- ‘রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা আল্লাহর মাস মহররমের আশুরার রোজা।’ (সুনানে কুবরা-৪২১০)।
মুসলিম শরিফে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- ‘মহানবী (সা.) যখন কেবল আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইহুদি-নাসারারা তো এই দিনটিকে বড়দিন মনে করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি, তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে, আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা এই ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব। (মুসলিম-১১৩৪)। যদিও তিনি পরের বছরের আশুরার আগেই ইন্তেকাল করেছিলেন।
তাই আমরা বলতে পারি, পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে অন্তত দুইটি রোজা রাখা উচিৎ। আমরা যারা পবিত্র আশুরার মর্ম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। তারা আগামী বছর ইনশা’আল্লাহ আশুরাকে যথাযথভাবে পালন এবং রোজা রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি আজই। কারণ, পৃথবী সৃষ্টির তারিখ যেমন এই আশুরা, তেমনি কেয়ামতও সংগঠিত হবে এই আশুরার দিনেই (এ বক্তব্যের সাথে কারও কারও ভিন্নমত রয়েছে)। মহান আল্লাহ আমাদেরকে আশুরার সকল ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

(ইসলামী স্কলারদের আলোচনা ও বিভিন্ন নিবন্ধ থেকে অনুপ্রাণীত এবং সংশ্লিষ্টদের লেখা নিবন্ধের সূত্র থেকে তথ্য সংগৃহিত)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020
Theme Customized By LiveTV