ক্রীড়া ডেস্ক :
সব ধরণের ক্রিকেটে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করে আজ থেকে মুক্ত হলেন দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। গতকাল বুধবার (২৮ অক্টোবর) শেষ হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ। ফলে দেশে ও দেশের বাইরে ক্রিকেট মাঠে আবারও সাকিবকে সমহিমায় দেখার অপেক্ষায় তাঁর অগণিত ভক্তরা।
দেশ সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান নতুন করে পথ চলা শুরু করবেন। সব ধরণের ক্রিকেট থেকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও ক্রিকেট মাঠে মুক্ত হলেন সাকিব। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করায় এক বছর আগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ক্রিকেটার সাকিব।
ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়ালের কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা ২০১৮ সালের বিপিএলের সময়। সাকিব সেটি আইসিসির ‘দুর্নীতি-দমন ইউনিটের ‘ (আকসু) কাছে জানাননি।
২০১৮ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজে আবারও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান। এবারও সাকিব আকসুকে তা অবহিত করেননি।
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালে আইপিএলে। ২৬ এপ্রিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলার সময় ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব এবং সেটাও আকসুকে জানাননি।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবের তথ্য না জানানোও অপরাধ। সবকিছু জানতে পেরে দীর্ঘ তদন্তের পর সাকিবকে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। এছাড়াও এক বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় তাকে। ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞায় পড়েন সাকিব।
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার ৮-১০ দিন আগে থেকেই ক্রিকেটের আকাশে ছিল কালো মেঘ। গত বছরের ২১ অক্টোবর থেকে ১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের ডাক। আচমকা এই ঘোষণায় পুরো দেশের ক্রিকেট যেন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। সামনে ভারত সফর, ক্রিকেটাররা ধর্মঘট প্রত্যাহার না করলে ভারত সফরে যাবে কারা। ক্রিকেটারদের কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) কোনঠাসা হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত অনেক নাটক আর অপেক্ষা পার করে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে ক্রিকেটাররা ধর্মঘট তুলে নেন।
শুরু হয় ভারত সফরের প্রস্তুতি। কিন্তু এক ঝামেলা শেষ হতেই আরেক ঝামেলার জন্ম। ভারত সফরের প্রস্তুতিতে অনুশীলন ক্যাম্পে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি ম্যাচেও নেই সাকিব। এমনকি নেই টিম মিটিংয়েও। তখনই অনেকটাই নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছিল ভারত সফরে যাচ্ছেন না সাকিব।
ঘর্মঘটের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিক্সিং নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলন ফিক্সিং নিয়ে আরও বড় খবর আসছে। ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় জানা গেল, আইসিসি থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েঝেন সাকিব। ক্রিকেটোরদের আন্দোলন, ক্রিকেট বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্ব, পাপনের ইঙ্গিত-সব মিলিয়ে সেসময় সাকিবের নিষেধাজ্ঞার জন্য অনেকেই বিসিবি সভাপতি পাপনের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে ক্রিকেট অঙ্গন ছিলো উত্তপ্ত।
তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ায় খেলোয়াড় হিসেবে সাকিবের খুব বেশি ম্যাচ মিস হয়নি। এ সময়ে তিনটি আন্তর্জাতিক সিরিজ ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারেননি সাকিব। কারণ গত বছর অক্টোবরে নিষিদ্ধ হওয়ার পর চলতি বছর মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে কোনো ধরণের ক্রিকেট আর মাঠে গড়ায়নি। এ বছরও আর কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নেই বাংলাদেশের।
নিষিদ্ধ হওয়ার পরপরই নভেম্বরে ভারত সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিল টাইগাররা। কাজেই এই সিরিজটি খেলতে পারেননি সাকিব।
ভারত সফরের পর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই আসরটি নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি সাকিব।
বিপিএল শেষ হওয়ার পর চলতি বছর জানুয়ারি মাসে তিন ধাপের পাকিস্তান সফরের প্রথম ধাপে পাকিস্তান সফরে যায় বাংলাদেশ। তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলে চলে আসে টাইগাররা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় ধাপে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলে ফিরে আসে বাংলাদেশ। এই সফর মিস করেন সাকিব।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে একটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে জিম্বাবুয়ে। এই সিরিজটিও খেলতে পারেননি সাকিব।
এরপর করোনার কারণে পুরো বিশ্বের ক্রিকেট স্থবির হয়ে পড়ে।
অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটের অংশ হয়ে যাবেন সাকিব আল হাসান। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন সাকিব আল হাসান। দেশে ফিরেই যোগ দেবেন অনুশীলনে। সবকিছু ঠিক থাকলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আয়োজনে আগামী মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে আবারও ক্রিকেট মাঠে ফিরবেন সাকিব।
সাকিব ফেরাতে চিন্তা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে বিসিবির নির্বাচকদের। নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন বলেন, সাকিবের ফেরাটা অবশ্যই বড় একটা ইম্প্যাক্ট ফেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। সাকিব খেলা মানে আমরা একজন বোলার ও ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলতে পারি। পুরো টিমে আত্মবিশ্বাসটা পরিবর্তন হয়ে যাবে। গত এক বছরে যদিও বেশি খেলা মিস করতে হয়নি তাকে। করোনা মহামারির কারণে।
এক বছর ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা সাকিব ফিরেই সঙ্গে সঙ্গে ভালো কিছু করবে না, সাকিবকে সময় দিতে হবে। এটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের আগের ছন্দে ফিরে যেতে সময় লাগবে না বলে আশা করেন বিসিবির এই নির্বাচক।